পর্দা উঠলো তিনদিনব্যাপী ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ মেলার’

লাস্টনিউজবিডি, ২৬ জানুয়ারি: পর্দা উঠলো তিনদিনব্যাপী ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ মেলা- ২০২৩‘র। বৃহস্পতিবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক ভিডিও বার্তায় মেলার উদ্বোধন ঘোষণা করেন। ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী জনাব মোস্তাফা জব্বার এর সভাপতিত্বে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশের সংযুক্তির মহাসড়ক’ এই বছরের প্রতিপাদ্য নিয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ আয়োজিত এবারের মেলার প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা মন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি, এমপি। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এ কে এম রহমতুল্লাহ, এমপি, ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব আবু হেনা মোরশেদ জামান, অতিরিক্ত সচিব মো: মাহবুব –উল-আলম, হুয়াওয়ের ভাইস প্রেসিডেন্ট ব্লিফ হু এবং আইএসপিএবি সভাপতি ইমদাদুল হক।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী ডিজিটাল বাংলাদেশ মেলা আয়োজনের তাৎপর্য তুলে ধরে বলেন, ডিজিটাল প্রযুক্তির জন্য প্রয়োজন ডিজিটাল সংযুক্তির মহাসড়ক। ১৯৮৭ সালে কম্পিউটারে বাংলা ভাষা উদ্ভাবনের মধ্য দিয়ে দেশে কম্পিউটার বিকাশের অভিয়াত্রা শুরু হয়। কম্পিউটার সাধারণের নাগালে পৌছে দিতে এবং দেশে ডিজিটাল প্রযুক্তি বিকাশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদৃষ্টি সম্পন্ন নেতৃত্বের ফলে ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত সময়ে দেশে ডিজিটাল প্রযুক্তির অভিযাত্রা শুরু হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ২০০৮ সালের ১২ ডিসেম্বর জননেত্র্রী শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচির ফলে বাংলাদেশ বিশ্বে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। গত ১৪ বছরে উন্নয়ন অগ্রগতির প্রতিটি সূচকে বাংলাদেশ অভাবনীয় সফলতা অর্জন করেছে।
বংলাদেশ এখন আর পশ্চাদপদ দেশ নয় উল্লেখ করে ডিজিটাল প্রযুক্তি বিকাশের এই অগ্রদূত বলেন, আমরা প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী আগামী ৪১’ সালে বাংলাদেশকে উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তুলব। আর সেই বাংলাদেশ হবে স্মার্ট বাংলাদেশ। সরকার ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার চারটি ভিত্তি সফলভাবে বাস্তবায়নে কাজ করছে। এগুলো হচ্ছে স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট অর্থনীতি, স্মার্ট সরকার ও স্মার্ট সমাজ। স্মার্ট বাংলাদেশে প্রযুক্তির মাধ্যমে সবকিছু হবে। সেখানে নাগরিকেরা প্রযুক্তি ব্যবহারে দক্ষ হবে। এর মাধ্যমে সমগ্র অর্থনীতি পরিচালিত হবে। সরকার ও সমাজকে স্মার্ট করে গড়ে তুলতে ইতিমধ্যেই বিশাল কর্মযজ্ঞ সম্পাদিত হয়েছে।
বাংলাদেশ এখন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেতে পারে। আমাদের নতুন প্রজন্ম অত্যন্ত মেধাবি। আমরা তাদের মেধা ও দক্ষতা কাজে লাগাতে পারলে আগামীর বাংলাদেশ হবে বিশ্বের বিস্ময়। তিনি বলেন, শিক্ষার ডিজিটাল রূপান্তরের কাজ আমরা শুরু করেছি। প্রযুক্তির শক্তিশালী ভিত্তির উপর স্মার্ট বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা লাভ করবে বলে মন্ত্রী দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মেলার আয়োজনের উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করে বলেন, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ বাঙালি জাতির হাজার বছরের ইতিহাসের মহানায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের বছর ২০২০ সালের ১৬ থেকে ১৮ জানুয়ারি প্রথম ডিজিটাল বাংলাদেশ মেলার আয়োজন করা হয়। ২০২১ সালে আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ যুগ অতিক্রম করেছি। ২০২১ ও ২২ সালে করোনার জন্য মেলার আয়োজন করা যায়নি। আমি দৃঢ়ভাবে প্রত্যাশা করছি যে আগামী দিনের এ মেলা হবে স্মার্ট বাংলাদেশ মেলা। এ বছরের এই মেলার মধ্য দিয়ে আমরা ডিজিটাল যুগের অর্জন গুলো তুলে ধরার চেষ্টা করবো। ডিজিটাল প্রযুক্তি উদ্ভাবন, উপযোগী মানব সম্পদ সৃষ্টি, ডিজিটাল প্রযুক্তির আধুনিক সংস্করণের সাথে জনগণের সেতুবন্ধন তৈরি এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচি বাস্তবায়নের অগ্রগতি তুলে ধরাই ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ মেলা’ ২০২৩ এর অন্যতম মূল লক্ষ্য বলে মন্ত্রী উল্লেখ করেন। প্রতিদিন সকাল ১০ টা থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত দর্শনাথীদের জন্য মেলার স্টল খোলা থাকবে।
www.digitalbangladeshmela.org.bd বিস্তারিত তথ্য জানা যাবে। মেলার এই ওয়েব সাইটে ক্লিক করে দর্শনার্থীগণ বিনা মূল্যে নিবন্ধন করা যাবে।
এই মেলায় ৫২টি প্যাভিলিয়ন এবং ৭৭ টি স্টল বিভিন্ন ডিজিটাল প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান তাদের পণ্য প্রদর্শন করবে। এর মধ্যে, প্যারেন্টাল কন্ট্রোল, ট্রিপল প্লে (এক ক্যাবলে ল্যান্ডফোনের লাইন, ইন্টারনেট ও ডিশ সংযোগ), মোবাইল অ্যাপস, ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা ও ডিজিটাল প্রযুক্তি ইত্যাদি প্রদর্শন করা হবে। প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান হুয়াওয়ে, জেডটিই, এবং বিভিন্ন মোবাইল উৎপাদনকারি প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের উৎপাদিত পণ্য দেখাবে, দেশি সফটওয়্যার কোম্পানিগুলো তাদের তৈরি সফটওয়্যার ও সেবা উপস্থাপন করবে। টেলিকম অপারেটরগুলো তাদের ভয়েস, ইন্টারনেট ও মূল্য সংযোজিত সেবা (ভ্যাস) দেখাবে। মেলায় লাইভ দেখা যাবে ফাইভ-জি। মেলায় বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে পৃথক কর্নার থাকবে। সেই কর্নারে প্রযুক্তির মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর জীবনী তুলে ধরা হবে।
মেলায় ৮ টি সেমিনারের মাধ্যমে সরকারের মাননীয় মন্ত্রী এবং অভিজ্ঞ বক্তারা বর্তমানের প্রযুক্তি ও আগামী দিনে প্রযুক্তির গন্তব্য নিয়ে কথা বলবেন। এর মধ্যে উদ্বোধনের দিন ২৬ জানুয়ারি মিডিয়া বাজারে বেলা তিন টায় দক্ষতা উন্নয়ন ও শিক্ষার ডিজিটাল রূপান্তর: বাংলাদেশ প্রেক্ষাপট শীর্ষক আলোচনয় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, এমপি। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিটিআরসির কমিশনার ড. মুশফিক হাসান চৌধুরী। একই দিন উইন্ডি টাউন হলে বেলা তিন টায় মেইড ইন বাংলাদেশ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন- বাণিজ্য মন্ত্রী জনাব টিপু মুনশি, এমপি। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন ফেয়ার গ্রুপের চিফ মার্কেটিং অফিসার জনাব মো: মেসবাহ উদ্দিন।
আগামীকাল ২৭ জানুয়ারি মিডিয়া বাজারে বেলা ১১ টায় পঞ্চম শিল্প বিপ্লব ও ফাইভি-জি অবকাঠামো: বাংলাদেশের প্রস্তুতি শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে।
অনুষ্ঠানে আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখবেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী জনাব মোস্তাফা জব্বার। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মোহাম্মদ মাহফুজুল ইসলাম। ২৭ জানুয়ারি উইন্ডি টাউনে বেলা ১১ টায় দুর্যোগকালীন সময়ে টেলিযোগাযোগ খাত: শীর্ষক পূর্ব ও পরবর্তী কৌশল করণীয় আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে।
অনুষ্ঠানে আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখবেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ড. মোহাম্মদ এনামুর রহমান. এমপি। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন বিটিআরসির মহাপরিচালক (এসএন্ডএস) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জনাব নাসিম পারভেজ। ২৭ জানুয়ারি উইন্ডি টাউনে বেলা ৩ টায় ডাটা সায়েন্স রোবটিক্স এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা; বাংলাদেশ প্রেক্ষিত শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। অনুষ্ঠানে বিজ্ঞান ও তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখবেন।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোবটিক্স বিভাগের অধ্যাপক ড. লাফিফা জামাল। ২৭ জানুয়ারি বেলা তিন টায় ডিজিটাল রূপান্তর: ভবিষ্যত বাংলাদেশের অর্থনীতির চালিকা শক্তি শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে। অনুষ্ঠানে আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখবেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক ড. শামসুল আলম।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন পিডব্লিওসি বাংলাদেশের ম্যানেজিং পার্টনার মামুন রশিদ। মেলার শেষ দিন ২৮ জানুয়ারি মিডিয়া বাজারে বেলা ১১ টায় নিরাপদ ডিজিটাল সমাজ: রাষ্ট্রের ভূমিকা শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখবেন আইন. বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী জনাব আনিসুল হক. এমপি। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন বিজিডি ই-গভ সিআইআরটি প্রকল্প পরিচালক তারেক এম বরকতউল্লাহ। ২৮ জানুয়ারি বেলা ১১ টায় উইন্ডি টাউনে স্মার্ট সিটি বিনির্মাণে প্রযুক্তির মহাসড়কে বাংলাদেশ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখবেন স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী জনাব তাজুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য প্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. এবিএম মইনুল হোসেন। এছাড়া ২৮ জানুয়ারি সন্ধ্যা ৬ টায় ডিজিটাল বাংলাদেশ মেলার সমাপনী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে। ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী জনাব মোস্তাফা জব্বার এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন পরিকল্পনা মন্ত্রী জনাব এম. এ. মান্নান, এমপি।
২৮ জানুয়ারি শনিবার মেলা প্রাঙ্গণে সকাল ১০ টায় শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে।
লাস্টনিউজবিডি/পি
সর্বশেষ সংবাদ
- হজযাত্রী নিবন্ধনের সময় আবার বাড়ল
- শ্রীমঙ্গলে উপজেলা প্রশাসনের ইফতার বিতরণ
- বাংলার সার্বজনীন গ্রহণযোগ্যতা নিশ্চিত করতে হবে: মোস্তাফা জব্বার
- সিজিডিএফ হিসেবে গোলাম ছরওয়ার ভূঁঞা এর দায়িত্ব গ্রহণ
- রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডে ভবনে আগুন
- মসিকের উদ্যোগে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবার ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা