বাংলাদেশ শিগগিরই ইলেকট্রিক গাড়ী তৈরী করতে পারবে: মাতলুব আহমাদ

লাস্টনিউজবিডি, ২৪ ডিসেম্বর: বাংলাদেশ অটোমোবাইলস এসেম্বলার্স এন্ড ম্যানুফ্যাকক্সারার্স এসোসিয়েশনের (বামা) সভাপতি, এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি, আইবিসিসিআইর সভাপতি নিটল-নিলয় গ্রুপের চেয়াম্যান আবদুল মাতলুব আহমাদ বলেছেন, বাংলাদেশে শিগগিরই ইলেকট্রিক গাড়ী তৈরী করতে পারবে বলে আশা করেন । তবে সরকারের সার্বিক সহায়তা আরো বাড়াতে হবে। তিনি বলেন, সালফার ফ্রি ডিজেল সরবরাহের সরকারকে ব্যবস্থা নিতে হবে। বেসরকারী পর্যায়ে একইভাবে আনতে হবে। পাশাপশি চলমান গাড়িগুলো যাতে আগামী দুই, তিন বছর চলতে পারে সেজন্যে খুঁচড়া যস্ত্রাংশ আমদানি সম্পূর্ণ শুল্কমুক্ত করার আবেদন জানান। কারণ কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে তিনমাসে অটোমোবাইল খাতে আনুমানিক ছয় হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন ।
কর বাহাদুর আব্দুল মাতলুব আহমাদ বলেছেন, ডিজেল, পেট্রোল ও অকটেন চালিত গাড়ির মেইনটেনেন্স খরচ বেড়ে যাওয়ায় আগামীতে ইলেকট্রিক গাড়িই হবে দেশের প্রধান যানবাহন। তাই সরকারের পলিসি পেলে শিগগিরই ‘মেইডইন বাংলাদেশ’ ইলেক্ট্রিক গাড়ি এদেশে তৈরি করে বিদেশেও রপ্তানি করা যাবে।
নিটল-নিলয় গ্রুপের চেয়ারম্যান বলেন, বর্তমানে আমরা ডিজেল, পেট্রোল ও অকটেন চালিত গাড়ি ব্যবহার করছি। এগুলোর দিন এখন শেষ হয়ে আসছে। সম্ভাবনাময় দিক হচ্ছে ইলেকট্রিক গাড়ি। যেটা রিনিউয়েবল এনার্জিতে চলতে পারে কিংবা অন্য কোন প্রসেসরে ব্যাটারি চার্জ হতে পারে। এই নতুন ফর্মুলায় গাড়িটা আগের থেকে চালিকাশক্তি একদম ডিফারেন্ট। যেটায় আল্টিমেট খরচ অনেক কম পড়বে। আজকে পেট্রোল, ডিজেল ও অকটেনের দাম যেভাবে বাড়ছে তাতে ডিজেল-পেট্রোল চালিত গাড়ির মেইনটেনেন্স খরচ বেড়ে যাবে কয়েকগুণ। আর এ গাড়ি বানিয়ে বাংলাদেশে মার্কেট করবো সেটাও সম্ভব হবেনা। এখন ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ইলেকট্রিক গাড়ির ডিমান্ড বাড়ছে। আর ইন্টারনাল কম্বুইশন ইঞ্জিনের (আইসিই) গাড়ির ডিমান্ড কমছে।
তিনি বলেন, ইন্টারনাল কম্বুইশন ইঞ্জিনের (আইসিই) গাড়ি সারা পৃথিবীতে ওভার ক্যাপাসিটি। আমরা এখানে বানিয়ে যে দামে বেঁচবো তার চেয়ে অনেক কমে কিন্তু সারা গৃথিবীতে পাওয়া যাবে। আমরা যদি ডিউটি ওয়াল দিয়ে এটিকে বাঁচিয়ে রাখি তবে যখন ডিউটি সরে যাবে তখন আর এটা বাঁচবে না। আমাদের ভবিষ্যৎ হচ্ছে ইলেকট্রিক গাড়ি। ইলেকট্রিক গাড়ি সারা ওয়ার্ল্ডে এখনো সেভাবে গ্রো করেনি। তাই বাংলাদেশ সরকার এখন যদি তার পলিসিতে ইলেকট্রিক গাড়ির উপর ফোকাস দেন তাহলে আমরা ‘মেইডইন বাংলাদেশ’ ইলেক্ট্রিক গাড়ি তৈরি করতে পারব। যেমন সরকারের সহায়তায় টু হুইলার, থ্রি হুইলার, ফোর হুইলার চায়না অনেক আগেই শুরু করেছে। ভারত গত ২ বছর থেকে করছে।
আব্দুল মাতলুব আহমাদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এনভারমেন্টের ওপর প্রাইজ পেয়েছেন। আর এই এনভারমেন্টের ওপরই কাজ করছেন তিনি। ইলেকট্রিক গাড়ির একটা বড় বৈশিষ্ট্য হলো এনভারমেন্ট ফেনী। সেজন্য আমি মনে করি, আমাদের ইকোনমিক পলিসিতে যদি ইলেকট্রিক ভেহিকেলকে এনকারেজ করা হয়, সাবসিডাইজড করা হয় পাশাপাশি হোম সোলার পাওয়ারে সরকার ৫০ ভাগ সাবসিডি দেন তাহলেই কেবল ইলেকট্রিক গাড়ি ‘মেইডইন বাংলাদেশ’ করা সম্ভভ।
তিনি বলেন, আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে সরকারের সেভাবে সহায়তা লাগবেনা তবে প্রথম পাঁচ বছর ডিউটি ফ্রি করে দিতে হবে। একটা ইলেকট্রিক গাড়ির ৪০ থেকে ৫০ শতাংশই হচ্ছে ব্যাটারির খরচ। যার জন্য সরকারকে আপাতত ভর্তুকি দিতে হবে ৫ বছর। কাস্টমারদের জন্য ইলেকট্রিক গাড়িতে বেশি ভর্তুকি না দিলে কেউ এটা কিনবে না। চার্জিং স্টেশন আমরাই বসাবো তবে সরকারের লাগবে বিভিন্ন জায়গায় এগুলো প্লেস করার জন্য পলিসি। আর যে গাড়ি আমরা তৈরি করব এটা বাসা থেকেই চার্জ করা যাবে। গাড়িগুলোর মাইলেজ বেড়ে ১৫০ থেকে ৪০০ কিলোমিটার পর্যন্ত একক চার্জে চলবে। শুধুমাত্র চলতে চলতে যেখানে চার্জ ফুরিয়ে যাবে সেসব জায়গায় মোবাইল ফোনের মত ২০ মিনিট চার্জ দিলেই গাড়ি আবার চলবে। এখন টেকনিক্যাল অগ্রগতি হয়েছে, ব্যাটারিও অনেক সময় চার্জ থাকে। তাই আমি মনে করি এখনই ইলেকট্রিক গাড়ির বিষয়ে চিন্তা করার মুখ্য সময় ।

মাতলুব আহমাদ আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন ২০২০ সালকে লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং বছর ঘোষণা করেছেন তখন চীন ও ভারত থেকে আসা লাইট ট্রাকগুলোকে পিক আপ বলে ভুল রেজিস্ট্রেশন করা হচ্ছে। অবিলম্বে দেশের স্বার্থে এটা বন্ধ করার আবেদন জানান তিনি এবং একই সাথে বিআরটিএ কর্তৃক পিক আপের সঠিক সংজ্ঞায়নের দাবি করেন তিনি।
বামার ২৮ তম এজিএম উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলণে তিনি এসব আবেদন জানান।
সংবাদ সম্মেলনে বামার সাবেক সভাপতি ও রানার গ্রপের চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান খান। সহ- সভাপতি তাসকিন আহমেদ সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী দ্বীন, নির্বাহী সদস্য হুমায়ুন রশিদ, কাজী এমদাদ হোসেন বক্তব্য রাখেন।

সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদ সরকারের কাছে সাত দফা দাবি তুলে ধরেন বলেন, সকল ধরনের যানবাহনের নবায়ন সময় মত না করার কারণে সরকার যে জরিমানা করেছে তা জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত মওকুফ করে দিতে হবে।
তিনি দেশে বিদ্যুৎ চালিত যান ব্যবহারে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতে সরকারের নীতি সহায়তা প্রয়োজন। বিদ্যুৎ চালিত যান পরিবেশ বান্ধব, কার্বন নিঃসরণ করে না, কিন্তু যেহেতু দাম বেশি, জনগণ কিনতে চায় না। এক্ষেত্রে প্রয়োজন হলে ভারত, চায়নার মত বিদ্যুৎ চালিত গাড়িতে ভর্তুকি দেয়ার দাবি জানান। ব্যাটারি চালিত থ্রি হুইলারের ব্যাপারে সরকারের নীতিমালা দেয়া দরকার। এসব থ্রি হুইলার বন্ধ হবে নাকি চালু থাকবে এ বিষয়ে স্পষ্ট সিদ্ধান্ত দ্রুত দিতে হবে। এখন সরকারি সিদ্ধান্তে থ্রি হুইলার বন্ধ থাকার পরেও অবৈধ ভাবে চলাচল করছে, এত প্রচুর দুর্ঘটনা ঘটছে এবং প্রতি বছর সরকার এই খাত থেকে প্রচুর রাজস্ব হারাচ্ছে। মাল্টি এক্সেল ট্রাক রোড সেফটি হিসেবে খ্যাত। মাল্টি এক্সেল ট্রাকে ডিউটি দ্বিগুন থেকে তিন গুন পর্যন্ত বাড়ানোর কারণে মানুষ কিনছে না। রোড সেফটির কথা চিন্তা করে ও মানুষের কেনার সুবিধার জন্যে মাল্টি এক্সেল ট্রাকে ডিউটি কমানো প্রয়োজন। কমার্শিয়াল গাড়ি, টু হুইলার-থ্রি হুইলারের নবায়ন ফি কমাতে হবে। ফি বেশি হওয়ার কারণে মানুষ নবায়ন না করে অবৈধ ভাবে চালাচ্ছে। ফলে সরকার এখান থেকে বিপুল রাজস্ব হারাচ্ছে।
বাস, ট্রাক ও থ্রি হুইলারের লাইফ টাইম নীতি কঠোর ভাবে অনুসরণ করতে হবে। থ্রি হুইলারের ক্ষেত্রে থ্রি হুইলারের ১৫ বছরের লাইফ টাইম ঢাকা, চট্টগ্রামে নিয়ম মানা হলেও অন্য শহরে মানা হচ্ছে না। ঢাকা- চট্টগ্রামের মত সব শহরে এই লাইফ টাইম নীতি কঠোর ভাবে মানতে হবে।
সরকারের কাছে যানবাহনের ফিটনেস, টেক্স টোকেন এবং রেজিস্ট্রেশন নাবায়নের জন্য ছয় মাসের জরিমানা মওকুফসহ সাত দফা আবেদন জানিয়েছে বাংলাদেশ অটোমোবাইলস এসেম্বলার্স এন্ড ম্যানুফ্যাকক্সারার্স এসোসিয়েশন (বামা)।
বামার ২৮ তম এজিএম এ আবেদন জানানো হয় ।