বোয়ালখালীতে চাঞ্চল্যকর শিশু ইফতেকার হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন

লাস্টনিউজবিডি, ২০ জুন: চট্টগ্রামের বোয়ালখালীর চাঞ্চল্যকর শিশু ইফতেকার (০৭) হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন সহ ঘটনার সহিত জড়িত ০২ শিশু গ্রেফতার সহ আলামত উদ্ধার আলামত উদ্ধার করেছে পিবিআই চট্টগ্রাম জেলা।
ভিকটিম ইফতেকার মালেকুল মাসফি (০৭) কে ঘটনাস্থল আল্লামা শাহ অছিয়র রহমান মাদ্রাসা হেফজখানা ও এতিমখানা, চরণদ্বীপ দরবার শরীফে হেফজ বিভাগে ঘটনার ০৫ (পাঁচ) মাস পূর্বে ভর্তি করায়। সে মাদ্রাসার হেফজ খানার আবাসিকে থাকিয়া লেখাপড়া করিত। গত ০৫/০৩/২০২২ইং তারিখ সকালে মাদ্রাসার শিক্ষক জাফর আহাম্মদ বাদীর বাড়ীতে গিয়া জানান যে, ভিকটিম ইফতেকার মালেকুল মাসফি (০৭) কে খুঁজিয়া পাওয়া যাইতেছে না। তখন ভিকটিমের অভিভাবক ও আত্মীয়—স্বজন দ্রুত মাদ্রাসায় পৌঁছাইয়া মাদ্রাসার আশপাশ সহ অভ্যন্তরে খোঁজাখুঁজি শুরু করে। খোঁজাখুঁজি একপর্যায়ে একই দিন সকালে মাদ্রাসার ২য় তলায় মাদ্রাসার স্টোর রুমের ভিতরে দক্ষিণ কোনায় কম্বল ও তোষক দিয়া মোড়ানো গলাকাটা রক্তাক্ত অবস্থায় ভিকটিমের মৃতদেহ পায়।
মাদ্রাসার অন্যান্য ছাত্রদের শোর—চিৎকারে মাদ্রাসার শিক্ষকগন সহ আশপাশের লোকজন ঘটনাস্থলে গিয়া ভিকটিমকে মৃত অবস্থায় দেখিতে পায়। এই সংক্রান্তে ভিকটিমের মামা মোঃ মাসুদ খাঁন বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামী/আসামীদের বিরুদ্ধে স্থানীয় বোয়ালখালী থানায় মামলা নং—০৫, তারিখ—০৬/০৩/২০২২ইং, ধারা—৩০২/৩৪ পেনাল কোড আইনে মামলা দায়ের করেন।
মামলাটি বহুল আলোচিত হওয়ায় এবং পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স, ঢাকার স্মারক নং—৪৪.০১.০০০০.০৩৫.২৫.০২৪.২০২২—৭৫৫, তাং—১৬/০৩/২০২২ ইং তারিখ মূলে পিবিআই, চট্টগ্রাম জেলা মামলাটির তদন্তভার গ্রহণ করে।
পুলিশ সুপার, পিবিআই চট্টগ্রাম জেলা মহোদয়ের হাওলা মতে পুলিশ পরিদর্শক (নিঃ) জনাব সিরাজুল ইসলাম বিধি মোতাবেক মামলাটির তদন্তভার গ্রহণ করেন এবং তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেন। এক পর্যায়ে পিবিআই প্রধান অ্যাডিশনাল আইজিপি জনাব বনজ কুমার মজুমদার, বিপিএম (বার), পিপিএম মহোদয় সার্বিক দিক নির্দেশনায় এবং পুলিশ সুপার নাজমুল হাসান, পিপিএম—সেবা, পিবিআই চট্টগ্রাম জেলা মহোদয়ের সার্বিক তত্ত্বাবধানে মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক (নিঃ) জনাব সিরাজুল ইসলাম এর নেতৃত্বে পিবিআই চট্টগ্রাম জেলার একটি চৌকস অভিযানিক টিম গত ১৮/০৬/২০২২ ইং তারিখ ঘটনাস্থল আল্লামা শাহ অছিয়র রহমান মাদ্রাসা হেফজখানা ও এতিমখানা, চরণদ্বীপ দরবার শরীফের হেফজ বিভাগের সকল ছাত্রদের তাহাদের অভিভাবকগন সহ পিবিআই চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়ে আনিয়া অভিভাকদের উপস্থিতিতেই পর্যায়ক্রমে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে আইনের সংস্পর্শে আসা শিশু আমান (ছদ্মনাম) (১২) ও শিশু জামান (ছদ্মনাম) (১২) দ্বয় ভিকটিম ইফতেকার মালেকুল মাসফি(০৭) কে হত্যার ঘটনায় জড়িতদের নাম প্রকাশ করে।
আইনের সংস্পর্শে আসা উক্ত দুইজন শিশুর স্বীকারোক্তি মোতাবেক শিশু ভিকটিম ইফতেকার মালেকুল মাসফি(০৭) হত্যাকান্ডের ঘটনায় আইনের সহিত সংঘাতে জড়িত অপর দুই শিশু যথাক্রমে—১। আসাদ (ছদ্মনাম) (১৫) ও ২। আহাদ (ছদ্মনাম) (১৫) দ্বয়কে নিবিড়ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করিলে একপর্যায়ে তাহারা হত্যাকান্ডের ঘটনায় সরাসরি জড়িত ছিল মর্মে স্বীকার করে।
স্বীকারোক্তির প্রেক্ষিতে তাহাদেরকে গ্রেফতার করা হয়। হত্যাকান্ডের কারন হিসেবে জানা যায় যে, ঘটনাস্থল হেফজখানা মাদ্রাসাটি ভিকটিমের বাড়ীর পার্শ্বে অবস্থিত। ভিকটিমকে তাহার অভিভাবক প্রায় সময় বাড়ী হইতে রান্না করা খাবার ও নাস্তা পাঠাইতো। ভিকটিমের বাড়ী হইতে প্রেরিত উক্ত খাবার ও নাস্তাগুলো গ্রেফতারকৃত দুই শিশু খেয়ে ফেলতো। এই বিষয়টি শিশু ভিকটিম ইফতেকার মালেকুল মাসফি (০৭) তাহার বড় ভাই ইমতিয়াজ মালেকুল মাজেদকে জানায়। তখন ভিকটিমের বড় ভাই শিশু আসাদ (ছদ্মনাম) (১৫) কে ভিকটিমের খাবার খেতে নিষেধ করে এবং মাদ্রাসা শিক্ষক মাওলানা জাফর আহাম্মদকে বিষয়টি জানায়। ভিকটিমের খাবার খেতে নিষেধ করায় আসাদ (ছদ্মনাম) (১৫) ভিকটিমের উপর ক্ষিত হয় এবং তা মনের মধ্যে তাহা পুষে রাখে।
অত্র মামলার ঘটনার দিন ভোরে শিশু আমান (ছদ্মনাম) (১২) পড়া দেওয়ার জন্য শিশু আসাদ (ছদ্মনাম) (১৫) কে খোঁজাখুঁজি করতঃ মাদ্রাসার দোতলার স্টোর রুমের সামনে পৌঁছাইয়া স্টোর রুমের সামনে আহাদ(ছদ্মনাম) (১৫) কে পাঁয়চারী করা অবস্থায় দেখিতে পায়। তখন শিশু আমান (ছদ্মনাম) (১২) স্টোর রুমের দরজায় দাঁড়াইয়া ভিতরের দিকে তাকাইলে শিশু আসাদ (ছদ্মনাম) (১৫) কে ভিতরে দেখিতে পায়। সে আরো দেখিতে পায় যে, ভিকটিমকে আসাদ (ছদ্মনাম) (১৫) কম্বল দিয়া চাপিয়া ধরিয়াছে, ভিকটিমের কান্নার শব্দ ও আমি আর কাউকে কিছু বলিবো না মর্মে ভিকটিমের কান্নারত কন্ঠ শুনিতে পায়। তখন স্টোর রুমের সামনে অবস্থানরত আহাদ (ছদ্মনাম) (১৫) শিশু আমান (ছদ্মনাম) (১২) কে ঘটনাস্থল হইতে নিচে চলিয়া যাইতে বলে এবং কাউকে কিছু না বলার জন্য হুমকি প্রদান করে। আসাদ (ছদ্মনাম) (১৫) ভিকটিমকে ঘটনাস্থল স্টোর রুমে নিয়া দেওয়ালের সহিত ভিকটিমের মাথা স্বজোরে আঘাত করে। আহাদ (ছদ্মনাম) (১৫) ভিকটিমের পা চাপিয়া ধরিলে আসাদ (ছদ্মনাম) (১৫) গলায় ছুরি দিয়া জবাই করতঃ মৃত্যু নিশ্চিত করে এবং কম্বল দিয়া মোড়াইয়া রাখিয়া সে নিচতলার হেফজখানার রুমে চলিয়া যায়। শিশু আসাদ (ছদ্মনাম) (১৫) এর স্বীকারোক্তি, দেখানো ও সনাক্তমতে ঘটনাস্থল হইতে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত ছুরি, কম্বল, ট্রাংক ও লাশ ঢেকে রাখার ব্যবহৃত ব্যানার উদ্ধার পূর্বক জব্দ করা হয়।
আইনের সহিত সংঘাতে জড়িত গ্রেফতারকৃত উক্ত দুই শিশুকে গত ১৯/০৬/২০২২ ইং তারিখ বিজ্ঞ শিশু আদালতে উপস্থাপন করা হইলে উভয়েই ফৌঃ কাঃ বিঃ ১৬৪ ধারা মোতাবেক স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে। অপরদিকে আইনের সংস্পর্শে আসা ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী শিশু আমান (ছদ্মনাম) (১৫) ও শিশু জামান (ছদ্মনাম) (১২) দ্বয় ফৌঃ কাঃ বিঃ ১৬৪ ধারা মোতাবেক বিজ্ঞ শিশু আদালতে ভিকটিম ইফতেকার মালেকুল মাসফি (০৭) কে হত্যার ঘটনায় জড়িতদের নাম প্রকাশ করতঃ ঘটনার বিবৃতি প্রদান করে। আইনের সহিত সংঘাতে জড়িত ও আইনের সংস্পর্শে আসা শিশুদের স্বীকারোক্তির প্রেক্ষিতে চাঞ্চল্যকর ভিকটিম ইফতেকার মালেকুল মাসফি(০৭) হত্যা মামলার রহস্য উদ্ঘাটিত হয়। মামলাটির তদন্ত কার্যক্রম চলমান রহিয়াছে।
লাস্টনিউজবিডি/আখি
সর্বশেষ সংবাদ
- পদ্মা সেতু উদ্বোধন অনুষ্ঠানের মঞ্চে প্রধানমন্ত্রী
- উদ্বোধনের আগেই গুগল ম্যাপে স্বপ্নের পদ্মা সেতু
- শতাধিক লঞ্চে করে জনসভায় মানুষের ঢল
- পদ্মা সেতু উদ্বোধন করতে পদ্মার মাওয়া প্রান্তের উদ্দেশ্যে রওনা প্রধানমন্ত্রীর
- পদ্মা সেতুর উদ্বোধন: ঢাক-ঢোল পিটিয়ে সভাস্থলে আসছেন মানুষ
- পদ্মা সেতু বাস্তবায়িত হওয়ায় বিএনপি খুশি হয়নি: তথ্যমন্ত্রী