দুবাইয়ের চোখ ধাঁধানো ১০ স্থান

লাস্টনিউজবিডি, ১১ মার্চ: সংযুক্ত আরব আমিরাতের সাতটি প্রদেশের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয়, প্রধান শহর, নিরাপদ শহর ও আমিরাতে বাণিজ্যিক রাজধানী দুবাই। দুবাইয়ের শাসক এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের ভাইস প্রেসিডেন্ট শেখ মোহাম্মদ বিন রশিদ আল মাকতুম। দেশটির প্রতিটি রাজ্যেই রয়েছে যেমন দৃষ্টিনন্দন ও গগনচুম্বী ভবন, তেমনি রয়েছে অসংখ্য দর্শনীয় স্থান, কৃত্রিম দ্বীপ, সাদা বালির সৈকতসহ কেনাকাটার জন্য বিলাসবহুল শপিং মল। এ কারণে ইউরোপ, আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ছুটে আসেন লাখ লাখ পর্যটক। দুবাইয়ের দর্শনীয় স্থানগুলো নিয়ে আমাদের আজকের আয়োজন।

১. বুর্জ খলিফা
বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু ভবন বুর্জ খলিফা, যা একইসঙ্গে একটি সাত তারকা হোটেল, মসজিদ, বিনোদনকেন্দ্র, নাইট ক্লাব, অ্যাপার্টমেন্ট, অফিস এবং বিশ্বের সর্বোচ্চ পর্যবেক্ষণ ডেক হিসেবে বিখ্যাত। ভবনটি জুমেইরা সৈকত থেকে ২৮০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। বুর্জ খলিফা ‘দুবাই টাওয়ার’ নামেও পরিচিত। ১৬০ তলাবিশিষ্ট আকাশচুম্বী এ ভবনটির মোট উচ্চতা ২ হাজার ৭১৭ ফুট, যার অবকাঠামো রকেটের মতো। এ ভবনে ঘণ্টায় ৪০ মাইল গতিবেগে চলে এমন মোট ৫৪টি এলিভেটর আছে। পর্যটকদের কাছে এটি নিঃসন্দেহে আরব আমিরাতের সবচেয়ে দর্শনীয় এবং আকর্ষণীয় স্থান। এ ভবনের সবচেয়ে আকর্ষণীয় জায়গা হলো ১২৪ তলার ওপরে প্রকৃতি দর্শনের জন্য পর্যবেক্ষণ ডেকটি। এখান থেকে শুধু দুবাই নয়, আরবের একটি বড় অংশ পর্যবেক্ষণ করা যায়। ভূমি ছেড়ে এ ভবনটি এতই উপরে উঠেছে যে, একই বিল্ডিংয়ে থাকা সত্ত্বেও এখানকার মানুষজন ভিন্ন ভিন্ন সময়ে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত দেখতে পান। শুধু উচ্চতাই নয়, বুর্জ খলিফার আভিজাত্য এবং চোখ ধাঁধানো নির্মাণশৈলী এক মুহূর্তেই আপনাকে বিমোহিত করে তুলবে। তবে বুর্জ খলিফা ভ্রমণের ক্ষেত্রে সূর্যোদয়ের সময়টি বেছে নিতে ভুলবেন না যেন।

২. বুর্জ আল আরব
বিশ্বের একমাত্র বিলাসবহুল সাত তারকা হোটেল বুর্জ আল আরব। ৩২১ মিটার লম্বা এ ভবনের অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছে অনেকটা পাল তোলা জাহাজ বা তিমি মাছের মতো, যা জুমেরিয়া সৈকতে পাশে সমুদ্রের মধ্যে একটি কৃত্রিম দ্বীপের ওপর তৈরি করা হয়েছে। আকাশচুম্বী এ হোটেল বিশ্বের চতুর্থ সুউচ্চ ভবন। বিলাসবহুল এ হোটেলের অত্যাধুনিক রাজকীয় অন্দরসজ্জা, দৃষ্টিনন্দন অ্যাকুরিয়াম এবং চমৎকার ইন্টেরিয়র ডিজাইন আপনাকে দারুণ এক শিহরণ দেবে। হোটেলের প্রতিটি রুমেই রয়েছে ২৪ ক্যারেট স্বর্ণের আইপ্যাড, যার মাধ্যমে আপনি সহজেই হোটেল এবং রেস্তোরাঁর নানা তথ্য জানতে পারবেন। ব্যাপক ব্যয়বহুল এ হোটেলে প্রতি রাত থাকার জন্য খরচ হবে ৪ হাজার ৫০০ দিরহাম। তবে এত টাকা খরচ না করেও পাশে থাকা জুমেইরা সৈকতে গিয়ে নিজেকে ফ্রেমবন্দি করে নিতে পারেন আপনি।

৩. আটলান্টিস, দি পাম
আটলান্টিস, দি পাম হচ্ছে একটি হোটেল রিসোর্ট, যা দুবাইয়ের পাম জুমাইরাতে অবস্থিত। কৃত্রিম দ্বীপের ওপর তৈরি এটিই বিশ্বের প্রথম রিসোর্ট। দি পামে প্রবেশ করার ঠিক পর মুহূর্ত থেকেই এর বিলাসিতা ও চোখ ধাঁধানো জৌলুস আপনার মন কেড়ে নেবে। কয়েকদিনের অবসরে ছুটি কাটানোর জন্য এ রিসোর্ট খুবই জনপ্রিয়। হলিউড-বলিউডের অনেক তারকাই এখানে আসেন অবসর কাটাতে। খুব কাছ থেকে সেসব তারকার মুখোমুখি হতে পারেন আপনিও।

৪. পাম আইল্যান্ড
দুবাইয়ের পাম আইল্যান্ডটি বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় একটি জায়গা, যা মানুষের তৈরি কৃত্রিম দ্বীপগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোড়ন সৃষ্টিকারী। পর্যটন শিল্পের উন্নয়ন ও পর্যটকদের আকৃষ্ট করার উদ্দেশ্যে সাগরের বুকে তৈরি করা হয়েছে কৃত্রিম তিনটি দ্বীপ। সমুদ্রের ওপর বালি দিয়ে তৈরি তিনটি দ্বীপ এমনভাবে বসানো হয়েছে যা ওপর থেকে দেখতে একটি পাম গাছের মতো লাগে। এখানে রয়েছে বিলাসবহুল সব হোটেল আর রিসোর্ট। আরো রয়েছে নিজস্ব আবাসিক সৈকত, অ্যাপার্টমেন্ট, সুইমিং পুল, থিম পার্ক, রেস্তোরাঁ, শপিংমল, হাসপাতাল এবং খেলাধুলার সুবিধা।

৫. দুবাই স্বর্ণ মার্কেট
বিশ্বের সবচেয়ে কম দামে খাঁটি স্বর্ণ পাওয়া যায় যে দেশে, সে দেশটি হলো সংযুক্ত আরব আমিরাত। দুবাই শহরবাসীরা নিজেরাই একে স্বর্ণের দেশ বলে দাবি করেন।
প্রথমদিকে স্বর্ণের জন্য বিখ্যাত দু’টি দেশ ছিল ভারত ও চীন। তবে এ দেশ দু’টিকে ছাড়িয়ে বর্তমানে শীর্ষে দুবাই। প্রতি বছর স্বর্ণ কেনার জন্যই বিভিন্ন দেশ থেকে পর্যটকরা দুবাইয়ে ভিড় করে। সবাই দুবাই থেকে স্বর্ণালঙ্কার কিনতে প্রবল আগ্রহী। অনেকে আবার পুরনো স্বর্ণ বিক্রি করে নতুন স্বর্ণ কেনেন। ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্ববাজারে স্বর্ণের মোট প্রবাহের ৩০ থেকে ৪০ শতাংশই আসে দুবাই থেকে।

৬. স্কি দুবাই
দুবাই ভ্রমণের পথে মরুভূমির বুকে ধু ধু করে বালি ওড়া কিংবা মরিচিকার দেখা পাওয়া স্বাভাবিক মনে হলেও বরফে স্কি করা প্রায় অসম্ভব। কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার এই যে, মরুভূমিতে ঝলসানো রোদ থাকলেও দুবাইয়েই কেবল মরুভূমির বুকে স্কি করা সম্ভব। তাও আবার বরফঘেরা মাঠে, যা ২২ হাজার ৫০০ বর্গমিটার এলাকা জুড়ে অবস্থিত। স্কি দুবাই মূলত একটি ইনডোর স্কি লাউঞ্জ, যেখানে পাওয়া যাবে পৃথিবীর সর্বপ্রথম ৪০০ মিটার দীর্ঘ ব্ল্যাক রান। লাউঞ্জের ভেতরে প্রবেশ করলে কিছু সময়ের জন্য হলেও আপনি পেতে পারেন এন্টার্কটিকা ভ্রমণের অনুভূতি। ভ্রমণপিপাসুদের জন্য স্কি দুবাইয়ের অভিজ্ঞতা উত্তেজনাপূর্ণ ও আনন্দময় মুহূর্ত সৃষ্টি করে। স্কি দুবাইয়ের প্রধান আকর্ষণ জেনেটু পেঙ্গুইন, কিং পেঙ্গুইন। এখানে পেঙ্গুইনদের সঙ্গে সাঁতার কাটাসহ কাচের বিশাল প্রাচীরের মাধ্যমে পেঙ্গুইনের মুখোমুখি হওয়া সত্যি অতুলনীয়। শুন্যের নিচে মাইনাস ৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রায় বসেও আপনি মজা করে আইসক্রিম বা মগ ভর্তি গরম কফি খেতে পারেন। সে জন্য আপনাকে অবশ্যই বিশেষ এক ধরনের পোশাক পরতে হবে।

৭. দুবাই ম্যারিনা
সংযুক্ত আরব আমিরাতের আরেক সুউচ্চ ভবন দুবাই ম্যারিনা। যেখানে রয়েছে বিশাল বিশাল সব আকাশছোঁয়া ভবন, বিলাসবহুল সৌন্দর্যে আবেশিত প্যাঁচানো ‘ক্যানন টাওয়ার’, সমুদ্র সৈকত, যা ট্যুরিস্টদের মন কেড়ে নেয় এক নিমিষেই। সুন্দর আবহাওয়ার একটি দিন বেছে নিয়ে ঘুরে আসতে পারেন দুবাই ম্যারিনা থেকে। এখানে ‘ওয়াটার ট্যাক্সি’ নিয়ে ঘুরতে পারেন ম্যারিনার অন্যতম ক্রুজে; কিংবা প্রিয়জনদের সঙ্গে সূর্যাস্ত দেখতে দেখতে অসাধারণ একটি ডিনারও করে নিতে পারেন।

৮. কোরআন পার্ক
ইসলামের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ আল কোরআনে উল্লিখিত বিভিন্ন উদ্ভিদ ও অলৌকিক মহিমা সব ঘটনার সমাহার যেন এক পার্কেই। অসাধারণ শিল্পকর্ম, কারুকাজ ও শৈল্পিক নকশায় তুলে ধরা হয়েছে সব কিছু। পার্কে প্রবেশ করলেই দর্শন মিলবে পবিত্র কোরআনে উল্লিখিত সব উদ্ভিদের। যাতে বিনামূল্যে প্রবেশের সুযোগ রয়েছে যে কারও। যে কোনো ধর্মের অনুসারীর। সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে অবস্থিত অসাধারণ পার্কটি। যার নাম দেওয়া হয়েছে কোরআন পার্ক। দুবাইয়ের আল খাওয়ানিজ অঞ্চলের ৬০ হেক্টর জমির ওপর গড়ে তোলা হয়েছে কোরআন পার্ক। পার্কটি তৈরি করা হয়েছে পবিত্র কোরআনে উল্লেখ করা গাছ-গাছালি এবং উল্লিখিত অলৌকিক ঘটনাবলির চিত্রায়ণের মাধ্যমে। পার্কের কাচ হাউসটিই পর্যটকদের বেশি আকর্ষণ করে। এ কাচ হাউসে কোরআন ও হাদিসে বর্ণিত ২৯ প্রজাতির সংরক্ষণ করা হচ্ছে। এসব উদ্ভিদ বিশেষ তাপমাত্রা ও পরিবেশগত বিশেষ নির্ণায়ক যন্ত্রের অধীনে সংরক্ষণ করা হচ্ছে। প্রত্যেক উদ্ভিদের পাশেই মার্বেল পাথরে খোদাই করা রয়েছে উদ্ভিদের নাম ও কোরআনের আয়াত। যা ইংরেজিতে অনুবাদ করা রয়েছে। এ ছাড়া পবিত্র কোরআনে উল্লেখ করা মোট ৫৪টি উদ্ভিদের প্রায় সব এ পার্কে রয়েছে।

৯. মিরাকল গার্ডেন
দুবাই মিরাকল গার্ডেন যেন এক ফুলের রাজ্য। পার্কে প্রবেশের মুখ থেকে শুরু করে পুরো পার্কজুড়েই রয়েছে হাজার হাজার প্রজাতির ফুল। কী নেই এ পার্কে। ফুল দিয়ে তৈরি মানুষের অবয়ব, ঘোড়া, বিড়াল, হাতি, গাছ! এমনকি বিমানও তৈরি করা হয়েছে হাজার প্রজাতির ফুল দিয়ে! এ পার্ক যে এক ফুলের সাম্রাজ্য। সংযুক্ত আরব আমিরাতে আসা পর্যটকদের অন্যতম জনপ্রিয় স্পটের একটি দুবাই মিরাকল গার্ডেন। পৃথিবীর সব চেয়ে বৃহৎ ফুল থেকে শুরু করে ক্ষুদ্রতম ফুল সবই রয়েছে এ মিরাকল গার্ডেনে। এক বর্গ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ফুল বেষ্টিত গার্ডেনটি এরই মধ্যে পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ ফুলের বাগান হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। এতে ১ লাখ ৯ হাজারেরও বেশি প্রজাতির ফুল রয়েছে এ বাগানে। গার্ডেনটি প্রতিবছরের অক্টোবর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত থাকে । জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মাত্রাতিরিক্ত তাপমাত্রার কারণে বন্ধ থাকে।

১০. শেখ জায়েদ গ্র্যান্ড মসজিদ
আমিরাতের রাজধানী আবুধাবির অন্যতম পর্যটক মুখর স্পটের মধ্যে একটি শেখ জায়েদ গ্র্যান্ড মসজিদ। প্রতি দিনই হাজার হাজার পর্যটকের পদচারণ মুখরিত থাকে দৃষ্টিনন্দন এ মসজিদের আঙ্গিনা। শুধু মুসলিম নয় অন্যান্য ধর্মের অনুসারীরাও প্রতিদিন ছুটে আসেন এ মসজিদটিকে এক নজর দেখতে। ৩০ একর জমির ওপর নির্মাণ করা মসজিদটি অবিশ্বাস্য সৌন্দর্যের অনন্য নিদর্শন। এ মসজিদে এক সঙ্গে প্রায় ৪০ হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন। মসজিদের অভ্যন্তরে সোনা, মোজাইক, টাইলস, কাচ এবং প্রচুর মার্বেল পাথর ব্যবহার করা হয়েছে। বাইরের দেয়াল তৈরি করা হয়েছে শ্বেতপাথর দিয়ে। মসজিদের কিবলার দেয়াল সাজানো হয়েছে আল্লাহর ৯৯ নাম খচিত অসাধারণ কারুকার্য দিয়ে। অত্যাধুনিক এ মসজিদে নারী ও পুরুষের জন্য রয়েছে পৃথক পৃথকভাবে নামাজ আদায়ের সুযোগ। মসজিদের অভ্যন্তরে রয়েছে অত্যাধুনিক অজুখানা ও শৌচাগার। যাতে গরম ও ঠান্ডা দুই ধরনের পানির ব্যবস্থা রয়েছে।
লাস্টনিউজবিডি/কেএম
সর্বশেষ
Comments are closed