শ্রীবরদীর সীমান্তে বাড়ছে চোরাচালান!

রেজাউল করিম বকুল, শেরপুর প্রতিনিধি: শীত উপেক্ষিত শেরপুরের শ্রীবরদীর সীমান্তে ভারত থেকে চোরাই পথে আসছে গরুর সাথে মাদকদ্রব্য। বিজিবি ও আইন শৃংখলা বাহিনীর অভিযানে আটক হলেও চলছে চোরাকারবারিদের তৎপরতা।
এসব ক্রয় বিক্রয় হচ্ছে উপজেলার হাড়িয়াকোনা ও খারামোরাসহ কয়েকটি গ্রামে।
চোরাকারবারি নিয়ে ঘটৈছে রক্তক্ষয়ী ঘটনা। কিছুদিন বন্ধ থাকলেও এখন চলছে এসব কারবার। এ নিয়ে আবারো সংঘর্ষের আশংকা করছেন স্থানীয় বাসিন্দাসহ সচেতন মানুষরা।
আজ বুধবার সরেজমিনে গেলে স্থানীয় লোকজন, চোরাকারবারি ও বিজিবিসহ বিভিন্ন সূত্রের সাথে কথা বলে ওঠে আসে এমন তথ্য।
জানা যায়, শ্রীবরদীর সীমান্তে হাড়িয়াকোনা ও খারামোরাসহ ১০/১২টি গ্রাম ঘেষাঁ ভারতের সীমানায় কাটাতারের বেড়া। বেড়ার নিচে পানি চলাচলের গোলাকৃতির কালভার্ট। কোথাও খাল বা নদীর প্রবেশ মুখ। কোথাও ব্রিজের নিচে খোলা অংশ। এসবের ফাঁক ফোকর দিয়ে যাতায়াত করছে চোরাকারবারিরা। বিএসএফ ও বিজিবিকে ফাঁকি দিয়ে প্রবেশ করছে ভারতের পোড়াকাশিয়ায়।
সেখান থেকে আনছে গরু ও মাদক দ্রব্য। প্রতিদিন ভোরে প্রকাশ্যে গরু বেচাকেনা হচ্ছে খারামোরা ও হাড়িয়াকোনাসহ কয়েকটি গ্রামে। মাদক বিক্রি হচ্ছে সিক্রেট। এ ব্যবসাকে কেন্দ্র করে বাড়ছে হুন্ডি ব্যবসায়ীদের আনাগোনা। হুন্ডির মাধ্যমে হাত বদল হচ্ছে লাখ লাখ টাকা।
সম্প্রতি আধিপত্য নিয়ে চোরাকারবারিদের মধ্যে দেখা দিয়েছে দ্বন্দ্ব। অভিযোগ রয়েছে কর্ণঝোড়া বিজিবি ক্যাম্পের এপেক্স ইকবাল হোসেনের বিরুদ্ধে। তিনি বিজিবিকে ফাঁকি দিয়ে চোরাচালানের সুযোগ দিচ্ছেন কতিপয় চোরাকারবারিকে। কেউ প্রতিবাদ করলে মাদকের মামলা দেয়ার হুমকি দেন। এতে চোরাকারবারিদের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে রুপ নিচ্ছে। ভয়ে মুখ খোলতে চান না বলে জানান অনেকে।
স্থানীয়রা জানান, চোলাচালান নিয়ে বিজিবি ও চোরাকারবারিদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছিল। ১০৯৩ পিলারের পাশ দিয়ে গরু নিয়ে আসার সময় বিএসফের গুলিতে নিহত হয়েছে মেঘাদল গ্রামের বঙ্গ সুরুজ আলীর ছেলে উকিল মিয়া (৩০) ও মাটিফাটা গ্রামের আজিজুল হকের ছেলে খোকন মিয়া।
আহত হয়েছে কুমারগাতি গ্রামের বীরেন দালবৎ এর ছেলে বিশ্বাস (৩৫)সহ অনেকে।
আসামের মানকেরচরের শঠিমারী গ্রামের খলিল মিয়ার ছেলে মফিজুল হক (৩০) ও খারামোড়া গ্রামের আব্দুল মতিনের ছেলে সুমন মিয়া (২৪) ২ হাজার ২শ ৫০ ভারতীয় রুপি, ৩শ ৭৫ পিস ইয়াবা ট্যাবলেটসহ বিজিবির হাতে আটক হয়েছিল।
সম্প্রতি কয়েকটি গরু আটক ও মাদক দ্রব্যও উদ্ধার হয়েছে। এরপরও থেমে নেই চোরাচালান। সন্ধ্যা হলেই ওইসব গ্রামে বেড়ে যায় চোরাকারবারিদের আনাগোনা। কেউ ওপার থেকে গরু ও মাদক দ্রব্য নিয়ে আসছে। কেউবা এদের মহাজন। কেউবা হুন্ডি ব্যবসায়ী।
টাকার লোভে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এ কাজে জড়িত হচ্ছে স্থানীয় হতদরিদ্র যুবকরা। এমনটাই জানান খারামোরা গ্রামের চোরাচালানের সাথে জড়িত মজিবরসহ অনেকে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য জহুরুল হক জানান, প্রশাসন ম্যানেজ করার নামে চোরাকারবারিদের কাছ থেকে টাকা নেয় আফছার, বাদশা আলী, কমল ও হাটের ইজারাদার।
সিংগাবরনা ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বীরমুক্তিযোদ্ধা নজরুল ইসলাম বলেন, চোরাচালান বৃদ্ধি পাওয়ায় সীমান্তের বাসিন্দারা শংকিত। বিজিবির এপেক্স ইকবাল হোসেন তার বিরুদ্ধে অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, কতিপয় ব্যাক্তিকে অবৈধ সুযোগ না দেয়ায় তারা আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা, বানোয়াট অভিযোগ তুলে সুনাম নষ্ট করতে চাচ্ছে। চোরাচালান বন্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত। কর্ণঝোড়া বিজিবি ক্যাম্প কমান্ডার আব্দুল লতিফ বলেন, আমাদের অগোচরে কি হয় তা জানিনা। তবে চোরাচালান বন্ধে বিজিবি সব সময় তৎপর। এসব বন্ধে বিজিবিসহ প্রশাসন কার্যকরী পদক্ষেপ নিবে। এমনটাই প্রত্যাশা স্থানীয় বাসিন্দাসহ সকলের।
লাস্টনিউজবিডি/আখি
সর্বশেষ সংবাদ
Comments are closed