রূপায়ণ গ্রুপের চেয়ারম্যানসহ ১৮ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট

লাস্টনিউজবিডি, ২৫ নভেম্বর: রূপায়ণ গ্রুপের চেয়ারম্যানসহ ১৮ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিটের অনুমোদন দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
আজ বুধবার দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে ওই চার্জশিট অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। কমিশনের পরিচালক (জনসংযোগ) প্রনব কুমার ভট্টাচার্য্য বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
চার্জশিটে ঢাকার বনানীর এফআর টাওয়ারের নকশা জালিয়াতির অভিযোগ তুলে ধরা হয়েছে। একইসঙ্গে এজাহারভুক্ত ৭ আসামিকে অব্যাহতি দিয়ে নতুন ৫ জনকে চার্জশিটভুক্ত করা হয়েছে।
চার্জশিটভুক্ত নতুন আসামিরা হলেন, রাজউকের উচ্চমান সহকারী মো. সাইফুল আলম, ইমারত পরিদর্শক ইমরুল কবির, ইমারত পরিদর্শক মো. শওকত আলী, উচ্চমান সহকারী মো. শফিউল্লাহ ও সাবেক অথরাইজড অফিসার মো. শফিকুল ইসলাম।
আরও পড়ুন:
বার কাউন্সিলের লিখিত পরীক্ষা ১৯ ডিসেম্বর
২০১৯ সালের ২৫ জুন কমিশনের উপ-পরিচালক মো. আবুবকর সিদ্দিক ২০ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। তিনিই তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
উল্লেখ্য, এফআর টাওয়ারকে ১৫তলা পর্যন্ত নির্মাণে ইমারত বিধিমালা লঙ্ঘন ও নকশা জালিয়াতির মাধ্যমে ১৮ তলা পর্যন্ত বাড়ানোর অভিযোগে ২০১৯ সালের ২৯ অক্টোবর চার্জশিট দেয় দুদক। চার্জশিটে এফআর টাওয়ার ভবনের এসএমএইচ আই ফারুক ও রূপায়ণ গ্রুপের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী খান মুকুলসহ ৫ জনকে আসামি করা হয়।
গণপূর্ত অধিদপ্তরের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী সৈয়দ নাজমুল হুদা মৃত্যুবরণ করায় তাকে চার্জশিট থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া অব্যাহতিপ্রাপ্তরা হলেন রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান কে এ এম হারুন, সাবেক সদস্য মো. রেজাউল করিম তরফদার, জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের অতিরিক্ত সচিব আ ই ম গোলাম কিবরিয়া, সাবেক প্রধান ইমারত পরিদর্শক মো. মাহবুব হোসেন সরকার, সাবেক ইমারত পরিদর্শক মো. আওরঙ্গজেব সিদ্দিকি ও গণপূর্তের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সামছুর রহমান।
চার্জশিটভুক্ত নতুন আসামিরা হলেন, রাজউকের উচ্চমান সহকারী মো. সাইফুল আলম, ইমারত পরিদর্শক ইমরুল কবির, ইমারত পরিদর্শক মো. শওকত আলী, উচ্চমান সহকারী মো. শফিউল্লাহ ও সাবেক অথরাইজড অফিসার মো. শফিকুল ইসলাম।
অন্যদিকে, মূল মামলার আসামিরা হলেন, এফআর টাওয়ারের মালিক এস এম এইচ আই ফারুক, রূপায়ণ গ্রুপের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী খান মুকুল, এফআরটাওয়ার ওনার্স সোসাইটির সভাপতি কাসেম ড্রাইসেলের এমডি তাসভীর-উল-ইসলাম, সাবেক পরিচালক মো. শামসুল আলম, বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক মো. মোফাজ্জল হোসেন, সহকারী পরিচালক শাহ মো. সদরুল আলম, সহকারী অথোরাইজড অফিসার মো. নজরুল ইসলাম, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক জাহানারা বেগম, সহকারী পরিচালক মেহেদউজ্জামান, নিম্নমান সহকারী মুহাম্মদ মজিবুর রহমান মোল্লা ও অফিস সহকারী মো. এনামুল হক। এছাড়া, বিসিএসআইআরের সদস্য (অর্থ) মুহাম্মদ শওকত আলী ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আবদুল্লাহ আল বাকিও ওই মামলায় আসামি ছিলেন। যারা অনুমোদিত চার্জশিটের আসামি।
দুদকের অভিযোগের বিবরণ থেকে জানা যায়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে প্রতারণা, জালিয়াতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে ইমারত নির্মাণ বিধিমালা, ১৯৯৬ এর বিধান লঙ্ঘন করেছেন। তারা রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের ছাড়পত্র ইস্যু, ফি জমা ও অনুমোদন না নিয়ে ভুয়া নকশায় এফআর টাওয়ারের ১৯ থেকে ২৩তলা পর্যন্ত নির্মাণ করে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে বন্ধক, ফ্লোর বিক্রি ও অগ্নিকাণ্ডে জনসাধারণের ব্যাপক ক্ষতিসাধন করেছেন। এ অভিযোগে দণ্ডবিধির ৪২০/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/১৬৬/ ১০৯ ধারাসহ দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭ এর ৫ (২) ধারায় চার্জশিট অনুমোদন দেয় দুদক।
প্রসঙ্গত, এফআর টাওয়ারকে ১৫তলা পর্যন্ত নির্মাণে ইমারত বিধিমালা লঙ্ঘন ও নকশা জালিয়াতির মাধ্যমে ১৮ তলা পর্যন্ত বাড়ানোর অভিযোগে ২০১৯ সালের ২৯ অক্টোবর চার্জশিট দেয় দুদক। চার্জশিটে এফআর টাওয়ার ভবনের এসএমএইচ আই ফারুক ও রূপায়ণ গ্রুপের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী খান মুকুলসহ ৫ জনকে আসামি করা হয়।

কামাল আতাতুর্ক এভিনিউয়ে ওই ভবনের জমির মূল মালিক ছিলেন প্রকৌশলী এস এম এইচ আই ফারুক। অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে ভবনটি নির্মাণ করে রূপায়ণ হাউজিং এস্টেট লিমিটেড। সে কারণে সংক্ষেপে ভবনের নাম হয় এফআর টাওয়ার।
অগ্নিকাণ্ডের পর সরকারের বিভিন্ন সংস্থা ৪টি তদন্ত কমিটি গঠন করে। এর মধ্যে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি নকশা অনুমোদনে বিধি লঙ্ঘন ও নির্মাণের ক্ষেত্রে ত্রুটি বিচ্যুতির জন্য রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যানসহ অর্ধশতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীকে চিহ্নিত করে প্রতিবেদন দেয়।
২০১৯ সালের ২৮ মার্চ এফআর টাওয়ারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ২৭ নিহত হওয়ার পর এই ভবন নির্মাণে নানা অনিয়মের বিষয়গুলো বেরিয়ে আসতে থাকে।
সর্বশেষ সংবাদ
Comments are closed