সিডরের তান্ডব আজও ভুলতে পারেনি উপকূলবাসী

গোফরান পলাশ, পটুয়াখালী প্রতিনিধি: পরিবারের তিন সদস্যকে ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর সুপার সাইক্লোন সিডর কেড়ে নেওয়ার পর শোকে মুহ্যমান হয়ে পড়ে পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার কাঞ্চনবাড়িয়ার আবুল পহলান (৬০)। প্রলয়ংঙ্কারী সিডরে কেড়ে নেয় তার স্ত্রী, পুত্র ও কন্যাকে। সেই থেকেই শোকে পাথর আবুল পহলান।
প্রকৃতির রুদ্ররোষে পরিবারের সদস্যদের হারিয়ে জেলে পেশা ছেড়ে নতুন করে পেশা পরিবর্তন করে এখন বাড়ির সামনে ছোট্ট একটি চায়ের দোকান দিচ্ছেন তিনি। আর দোকানের পাশেই স্ত্রী-নুরজাহান বেগম, কন্যা ও পুত্রের কবরের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকেন এখনও। যদিও নতুন করে বাঁচার আশায় সংসার বেঁধেছেন তিনি। এ ঘরেও রয়েছে একটি শিশুপত্র। কিন্তু সিডরের ক্ষত কাটিয়ে উঠতে পারেননি আজও।
গলাচিপা উপজেলার আমখোলা ইউনিয়নের কাঞ্চনবাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা মো. সামসুল পহলান বলেন, ’গলাচিপার আমখোলা ইউনিয়নের ২৭ জনের প্রলয়ংঙ্কারী ঘূর্ণিঝড়ে প্রাণ হানি ঘটে। এর মধ্যে ১৯ জনের লাশ বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করেন উপজেলা প্রশাসন। এখনও প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণি ঝড় সিডরের সেই ক্ষত মুছে যায়নি।’
আবুল পহলান আরও বলেন, ‘সিডরের রাইতে আমার স্ত্রী নুরজাহান (৪০), ছেলে সাইফুল ইসলাম (১৪) ও একমাত্র মেয়ে হালিমা বেগম (৭)কে নিয়ে রাঙ্গাবালীর চরকলাগাছিয়া ছিলাম। সন্ধ্যার পর থেকেই বাতাস শুরু হয়। এর পর পানির চাপ বাড়তে থাহে। আমরা বনের মধ্যে একটা মাচায় ছিলাম। হঠাৎ করেই একটা পানির ঢেউয়ে আমাদেরকে মাচাসহ ভাসাইয়া লইয়া যায়। পরের দিন স্ত্রী নুরজাহান ও ছেলে সাইফুলের লাশ পাইলেও আমার আদরের দুলালী হালিমাকে আজ পর্যন্ত আর পাই নাই। আমার মায়ের কতা (মেয়ে হালিমা) মনে ওডলে আর কিছুই ভালো লাগে না।’
তিনি বলেন, ’এই দিনে আমাগো গ্রামের ২৭জনকে সিডরে কাইড়া লইয়া গ্যাছে। তাই গ্রামের সবাই মিল্লা আমরা প্রতিবছর দোয়া মোনাজাতের আয়োজন করি। রবিবার বাদ জোহর এ দোয়া মোনাজাত করা হবে।’
উল্লেখ্য, ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর ঘূর্ণিঝড় সিডরের আঘাতে গলাচিপা উপজেলার (রাঙ্গাবালীসহ) ১৩৩ জনের প্রাণহানি ঘটে। ক্ষয়ক্ষতি হয় বহু গবাদি পশু ও সম্পদের।
লাস্টনিউজবিডি/সাজু
Comments are closed