অনির্দিষ্টকালের জন্য কারখানা বন্ধের হুমকি বিজিএমইএ-বিকেএমইএর

লাস্টনিউজবিডি, ২১ মে:বেতন-ভাতা পরিশোধকে কেন্দ্র করে প্রায় এক মাস ধরে দেশের শ্রমঘন শিল্প এলাকাগুলোতে অসন্তোষ চলে আসছে। ঈদের আগে এ পরিস্থিতি আরো নেতিবাচক রূপ নিয়েছে পোশাক কারখানাগুলোয়। বেতন-ভাতার দাবিতে গত কয়েক দিনে বেশকিছু কারখানায় ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে, যার মধ্যে কয়েকটি বড় কারখানাও রয়েছে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য কারখানা বন্ধের হুমকি দিয়েছে পোশাক শিল্প মালিকদের দুই সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ।
সম্প্রতি বেশকিছু কারখানায় ভাংচুরের প্রেক্ষাপটে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে গতকাল এক যৌথ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ। সেখানে সংগঠন দুটি বলেছে, আসন্ন ঈদকে সামনে রেখে গত কয়দিন ধরে বেতন-ভাতা আন্দোলনের নামে যেভাবে পোশাক কারখানা ভাংচুর করা হচ্ছে, তাতে রফতানিমুখী তৈরি পোশাক শিল্পে গভীর উত্কণ্ঠার সৃষ্টি হয়েছে। শিল্প ও শ্রমিক একে অপরের পরিপূরক। শিল্প ভালো থাকলে শ্রমিক ভালো থাকবেন। শ্রমিক তার জীবিকার উৎস ধ্বংস হতে দেবেন না, এটাই কাম্য। অথচ গতকাল পর্যন্ত ডিবিএল, ওপেক্স, মেডলার, ইমপ্রেস, ভিশন, ডিজাইনটেক্স, সেনটেক্স, সিভিক এপারেলস লিঃ ও ফকির নিটওয়্যারসহ অনেক পোশাক কারখানা ভাংচুর করা হয়েছে। গভীর উদ্বেগের সঙ্গে বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ লক্ষ্য করছে যে ছোট ও মাঝারি কারখানার পাশাপাশি বড় বড় কমপ্লায়েন্ট পোশাক কারখানা, যাদের কর্মপরিবেশ ভালো, বেতন-ভাতাও নিয়মিত পরিশোধ করা হয়, সেগুলোও আন্দোলনের নামে ভাংচুর করে শিল্পের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করা হচ্ছে। এ পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে উদ্যোক্তা সৃষ্টি ও বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত হবে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, বেলিসিমা ও সিভিক এপারেলস লিমিটেডের মালিকদের সরাসরিভাবে অপদস্থও করা হয়েছে, যা অনভিপ্রেত। এসব আইনবহির্ভূত ঘটনায় বহিরাগতদেরও উসকানি রয়েছে। উপরোক্ত ঘটনাগুলোর উপযুক্ত ছবি, তথ্য ও পর্যাপ্ত প্রমাণ বিজিএমইএ ও বিকেএমইএর হাতে রয়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতি চলমান থাকলে কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেয়া ছাড়া উপায় থাকবে না। এ ধরনের অরাজক পরিস্থিতি ও ভাংচুরের কারণে কারখানা ও ব্যবসা বন্ধ হলে মালিক-শ্রমিক উভয়েই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন, বিশেষ করে লাখো লাখো শ্রমিক ভাই-বোন কর্মহীন হয়ে পড়বেন। এতে করে সার্বিকভাবে অর্থনীতি পিছিয়ে পড়বে, সেই সঙ্গে সামাজিক ভারসাম্যও বিনষ্ট হবে, যা মোকাবেলা করা জাতির পক্ষে অত্যন্ত দুরূহ।
দুষ্কৃতকারীদের অনতিবিলম্বে আইনের আওতায় এনে কঠিন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের জন্য সরকারের প্রতি বিনীত অনুরোধ ও জোর দাবি জানিয়ে এ ব্যাপারে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছ থেকেও জোরালো পদক্ষেপ আশা করছে বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ। সংগঠন দুটি মনে করে, কোনো কারণে তৈরি পোশাক খাত ধ্বংস হলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন পোশাক শিল্পের শ্রমিকরা। কারণ তারা কর্মহীন হয়ে পড়লে তাদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারবে এমন কোনো খাত এখনো গড়ে ওঠেনি। তৈরি পোশাক শিল্প খাতে স্থিতিশীলতা ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখার বিষয়ে বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ সবার সহযোগিতা একান্তভাবে কামনা করছে।
বিজিএমইএ-বিকেএমইএ জানিয়েছে, বৈশ্বিক সমস্যা কভিড-১৯-এর প্রভাবে যখন সমগ্র বিশ্ব অর্থনীতির গতি-প্রকৃতি নড়ে গেছে, যার প্রত্যক্ষ প্রভাবে দেশের প্রধান রফতানি খাত তৈরি পোশাক শিল্প খাতও বিপর্যস্ত, ক্রেতারা একের পর এক ক্রয়াদেশ বাতিল করছেন, এমনকি অনেক ক্রেতা দেউলিয়াও হয়ে যাচ্ছেন, ঠিক এ রকম একটি স্পর্শকাতর সময়ে শ্রমিকদের সরলতার সুযোগ নিয়ে একটি স্বার্থান্বেষী মহল তাদের ব্যবহার করে শিল্পে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টির অপতত্পরতায় লিপ্ত রয়েছে, যা মোটেও কাম্য নয়। আবার এ আন্দোলনে অনুপ্রবেশকারীরাও রয়েছেন, যারা প্রকৃত শ্রমিক নন।
বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ মনে করে, বর্তমান সংকটময় মুহূর্তে বেতন-বোনাস ইস্যুতে কারখানা ভাংচুর করার যৌক্তিকতা নেই। কারণ সরকার, মালিক ও শ্রমিক ত্রিপক্ষীয় সিদ্ধান্তের আলোকে কারখানাগুলো সংকটের মধ্যে থেকেই আপ্রাণ চেষ্টা করে বেতন-ভাতা পরিশোধ করছে। কিছু কারখানায় অবশ্য ব্যত্যয় ঘটছে। কারণ এ কারখানাগুলোর অনেকেরই হাতে এখন কোনো কাজ নেই। তার পরও কারখানাগুলো এ বিষয়ে তাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। কিন্তু আশঙ্কার বিষয় হলো ত্রিপক্ষীয় কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বেতন ও বোনাস পরিশোধ করা সত্ত্বেও অনেক কারখানা ভাংচুরের সম্মুখীন হচ্ছে, যা শিল্পের জন্য একটি অশনিসংকেত এবং এটি ভবিষ্যতে উদ্যোক্তাদের কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে নিরুৎসাহিত করবে বলে বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ মনে করে।
You must be logged in to post a comment Login