গুজব, বেশি সজাগ ও সক্রিয় থাকতে হবে

আজ থেকে ৫০ বছর আগে বহু দূরের চাঁদে প্রথম বারের মতো পা পড়েছিল মানুষের। বিশ্ববাসী এ মাসে যখন চন্দ্রবিজয়ের অর্ধশত বর্ষপূর্তি উদযাপন করেছে, বাংলাদেশে আমরা তখন ”পদ্মা সেতুতে শিশুর কাটা মাথা লাগবে” বলে চরম অবৈজ্ঞানিক এক গুজব ছড়িয়ে, ইচ্ছেমতো একজনকে ‘ছেলেধরা’ আখ্যা দিয়ে পিটিয়ে মানুষ মারার মহোৎসবে মেতে উঠেছি।
এই একবিংশ শতাব্দীতে, যখন মানবজাতি গ্রহ থেকে গ্রহান্তরে ঘোরার চেষ্টায় রত, প্রযুক্তির কল্যাণে পৃথিবীর এক প্রান্তে সংঘটিত ঘটনার খবর মুহূর্তের মধ্যেই অপর প্রান্তের মানুষ জেনে যাচ্ছে, এমনকি কখনো কখনো তার চলমান ছবিও দেখতে পাচ্ছে, সেখানে এমন গুজবের পেছনে দৌড়ানো লোকদের মানুষ বলবো নাকি অমানুষ, ভেবে কুল পাই না।
তবে যেটাই বলি না কেন, এটা ঠিক, এ কোনো নির্বোধ গল্পবাজের উর্বর মস্তিষ্কের কাজ নয়। এর পেছনে নিশ্চিতভাবেই কোনো দুষ্টচক্র জড়িয়ে আছে। তারা সুদূরপ্রসারী কোনো দুরভিসন্ধি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এই ঘৃণ্য অপকর্মের সূচনা করেছে এবং তাতে ইন্ধন দিয়ে চলেছে।
সরকার ও তার আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গুজব নামের গজবটি দমনে যথেষ্ট সক্রিয়তার সাথে কাজ করেছে এবং তার ফলেই এ ক’দিনে তার প্রকোপ কিছুটা কমে এসেছে। সরকার এ জন্যে ধন্যবাদ পেতেই পারে। তবে আমাদের একটি কথা মনে রাখতেই হবে, এ ধরনের সামাজিক ব্যাধি দমনে সরকারের চাইতেও বেশি সক্রিয় থাকতে হয় সমাজকে অর্থাৎ সমাজের মানুষকে। গুজব হাওয়ায় ছড়ায় না। এর পেছনে থাকে মানুষ (পড়ুন অমানুষ) নামের প্রাণীগুলো। তারাই কোনো-না-কোনো মতলব হাসিলের লক্ষ্যে গুজব বানায়, গুজব ছড়ায়। গুজব নামের ওই গজব কত মানুষের জীবন তছনছ করে ফেলে, গত ক’দিনের সংবাদপত্রই তো তার জ্বলন্ত সাক্ষী।
সরকারের সক্রিয়তায় গুজবকারীরা পিছু হটেছে বলেই মনে হচ্ছে। তবে আমরা যেন এতেই তৃপ্ত না হই। কেননা গুজব নামের এই সামাজিক ব্যাধিটি দমনে সরকারের চাইতেও আমাদেরকেই বেশি সজাগ ও সক্রিয় থাকতে হবে – এ কথাটি আমরা যেন ভুলে না যাই।
You must be logged in to post a comment Login