এবার ইউনেস্কোতে যাচ্ছে রিকশা ও রিকশাচিত্র

লাস্টনিউজবিডি, ২৫ ডিসেম্বর, ডেস্ক: আসছে ২০১৮ সালে ইউনেস্কোর স্পর্শাতীত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্বীকৃতি পেতে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হচ্ছে ঐতিহ্যবাহী রিকশা ও রিকশাচিত্র। এরই মধ্যে এ জন্য সংস্থাটির কাছে মনোনয়নপত্র পাঠিয়েছে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়। ২০১৮ সালের ২৬ নভেম্বর থেকে ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত মরিশাসের পোর্ট লুইসে ইউনেস্কোর ‘স্পর্শাতীত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যবিষয়ক আন্তঃরাষ্ট্রীয় কমিটি’র (ইন্টার-গভর্নমেন্টাল কমিটি অন ইনট্যানজিবল হেরিটেজ) ১৩তম সভা হবে। সভার পর এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানা যাবে।
২০১২ সালে ইউনেস্কো স্বতঃপ্রণোদিতভাবে বাংলাদেশের বাউলসঙ্গীতকে সংস্থাটির স্পর্শাতীত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকাভুক্ত করে। ২০১৩ সালে জামদানিও একই স্বীকৃতি পায়। পরের বছরগুলোয় যথাযথ নিয়মে আবেদন না করায় তালিকা থেকে বাদ পড়ে যাত্রাপালা ও নকশিকাঁথার মতো সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। তবে তিন বছর পর ২০১৬ সালে বাংলা নববর্ষভিত্তিক শোভাযাত্রা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মঙ্গল শোভাযাত্রা ও চলতি বছর সিলেটের শীতলপাটির বুনন শিল্পকে স্পর্শাতীত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খানের তত্ত্বাবধানে গবেষণা, সংকলন ও ফোকলোর বিভাগের পরিচালক শাহিদা খাতুনের নেতৃত্বে সংশ্নিষ্ট আন্তঃরাষ্ট্রীয় কমিটির কাছে পাঠানোর জন্য ঢাকার রিকশা ও রিকশাচিত্রের মনোনয়নপত্র তৈরি করেছেন ড. ফিরোজ মাহমুদ। এর আগে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত জামদানি বুনন শিল্পী এবং মঙ্গল শোভাযাত্রার মনোনয়নপত্রও তিনি তৈরি করেন।
ঢাকার রিকশা ও রিকশাচিত্রের মনোনয়নপত্র প্রণয়নকারী ড. ফিরোজ মাহমুদ বলেন, ‘এ প্রক্রিয়ায় বিশ্ব মানবতার সঙ্গে পাঠানো উপাদানটির সম্পৃক্ততা তুলে ধরে সংক্ষিপ্ত একটি বর্ণনা, ১০টি আলোকচিত্র এবং ১০ মিনিটের একটি তথ্যচিত্র সংযুক্ত করে মনোনয়নপত্র তৈরি করা হয়। ছয়জন স্পর্শাতীত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য বিশেষজ্ঞ উপাদানটির পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন। তাদের সুপারিশের ভিত্তিতেই ২৪ রাষ্ট্র সদস্যবিশিষ্ট ইউনেস্কোর আন্তঃরাষ্ট্রীয় কমিটি যাচাই-বাছাই করে অনুমোদন দেয়।’ তিনি বলেন, এ মনোনয়নপত্র তৈরির জন্য একটি বিশেষজ্ঞ দল তৈরি করতে হবে। তা হলে ভবিষ্যতে আরও উপাদান বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অংশ হতে পারবে।
এ বিষয়ে সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বলেন, প্রতিবছর আমরা একটি করে উপাদান স্বীকৃতির জন্য পাঠাব। ২০১৮ সালে ঢাকার রিকশা ও রিকশাচিত্র পাঠানো হচ্ছে। আগামী দিনের পরিকল্পনা সম্পর্কে তিনি বলেন, ভবিষ্যতে বিশেষজ্ঞ দল গঠনের পরিকল্পনা করছি। সরকারি ও বেসরকারি উভয় খাতের বিশেষজ্ঞের মাধ্যমে মনোনয়নপত্র পাঠানো হবে।
ইউনেস্কোর স্পর্শাতীত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্বীকৃতি পেতে এরই মধ্যে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রাথমিকভাবে ১০টি উপাদানের বর্ণনাসহ তালিকা তৈরি করেছে। যেগুলোর মধ্যে রয়েছে- নকশিকাঁথা, পটচিত্র, শীতলপাটি, দানুশিল্প, সাভারের তামা-কাঁসা-পিতলের শিল্পকর্ম, ধামরাইয়ের কাঁসাশিল্প, ঢাকার রিকশা ও রিকশায় আঁকা চিত্রকর্ম, টাঙ্গাইলের ঝুড়ি শিল্প ইত্যাদি।
ইউনেস্কোর সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী, প্রতিটি রাষ্ট্র তার স্পর্শাতীত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের বিভিন্ন উপাদানের এক বা একাধিক জাতীয় পরিসংখ্যানপত্র বা ন্যাশনাল ইনভেন্টরি প্রকাশ করবে, যা নিয়মিত হালনাগাদ হবে। জাতীয় পরিসংখ্যানপত্র ইংরেজি অথবা ফরাসি ভাষায় ছাপতে হবে। এতে শুধু তালিকা নয়, নির্বাচিত প্রতিটি উপাদানের বিস্তারিত তথ্য ছবিসহ লিপিবদ্ধ করতে হবে। আপাতত ২০০৭ সালে এশিয়াটিক সোসাইটি থেকে প্রকাশিত ‘বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক পর্যালোচনা’ শীর্ষক কোষ গ্রন্থমালার একাদশ খণ্ডকে জাতীয় পরিসংখ্যানপত্র হিসেবে উপস্থাপন করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংস্কৃতিমন্ত্রী নূর।
এ গ্রন্থ থেকে সব মিলিয়ে পাঁচটি অনুচ্ছেদে ৫৭টি উপাদানের তালিকা করেছে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে ঐতিহ্যবাহী শিল্পকুশলতা সম্পর্কিত অনুচ্ছেদের ১৪টি উপাদানের মধ্যে রয়েছে- জামদানি বুনন শিল্প, নকশিকাঁথা সূচিশিল্প, পটচিত্র, শীতলপাটি, শোলাশিল্প, নকশি শিকা, কিশোরগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী পোড়ামাটির খেলার পুতুল, সোনারগাঁর কাঠের চিত্রিত হাতি-ঘোড়া-মমি-পুতুল, দারুশিল্প, সাভার অঞ্চলের তামা-কাঁসা-পিতলের শিল্পকর্ম, ধামরাইয়ের কাঁসাশিল্প, রিকশা ও রিকশায় আঁকা চিত্রকর্ম, কুমিল্লার ঐতিহ্যবাহী ঢাকঢোল এবং টাঙ্গাইলের ঝুড়ি শিল্প।
শিল্পকলা প্রদর্শন সম্পর্কিত অনুচ্ছেদের ২৩টি উপাদানের মধ্যে রয়েছে- রায়বেশে নৃত্য, মৈমনসিংহ গীতিকা, কুশান গান, অষ্টক গান, জারি-সারি গান, পালাগান, ব্রতচারী গান, পটগান, রাজশাহীর গম্ভীরা গান, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বোতল নৃত্য, চাকমাদের গ্যাংগুলি গান, পুঁথিপাঠ, যাত্রাশিল্প, কবিগান, লাঠিখেলা, ভাওয়াইয়া গান, চাকমা নৃত্য, গারো নৃত্য, মণিপুরি নৃত্য, বাউল গান, বেহুলার লাচারী, ঝাপান ও পদ্মার নাচন এবং কীর্তন।
সামাজিক চর্চা, আচার ও অনুষ্ঠান-উৎসব সম্পর্কিত অনুচ্ছেদের ১৭টি উপাদানের মধ্যে রয়েছে- রাসমেলা বা ওয়ানগালা, মঙ্গল শোভাযাত্রা, ঢাকার পহেলা বৈশাখ, মানিকগঞ্জের মহররম, ঢাকার নবান্ন উৎসব, জন্মাষ্টমী, দুর্গাপূজা, বিজু উৎসব, প্রবারণা পূর্ণিমা, সাপুড়েদের তন্ত্র/মন্ত্র ও ঝাড়ফুঁক, জ্যোতিষবিদ্যা, ধামরাইয়ের রথযাত্রা, একুশে ফেব্রুয়ারিতে শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ, অমর একুশে গ্রন্থমেলা এবং বেদভাসান।
ক্রীড়াঙ্গন সম্পর্কিত অনুচ্ছেদের দুটি উপাদানের মধ্যে রয়েছে- চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী জব্বারের বলিখেলা ও রংপুরের ঐতিহ্যবাহী নৌকাবাইচ। এ ছাড়া রয়েছে ঐতিহ্যবাহী আরেকটি উপাদান বাকরখানি।
লাস্টনিউজবিডি/এসএম
Comments are closed