সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন, আর পেছানো হবে না: প্রধানমন্ত্রী

লাস্টনিউজবিডি,১৪ নভেম্বর: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আগামী নির্বাচন খুব কঠিন নির্বাচন হবে। খুব প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে। এই সময় সবার ঐক্যবদ্ধ থাকা ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই।’
বুধবার গণভবনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার গ্রহণের সময় দেয়া বক্তব্যে এ কথা বলেন দলের প্রধান। বেলা সাড়ে ১২ টা থেকে দেড়টা পর্যন্ত প্রায় একঘণ্টা বক্তব্য দেন তিনি।
একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগ মুহূর্তে দলের সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, সংবিধান অনুযায়ী যথাসময়ে নির্বাচন হবে। নির্বাচন আর পেছানো হবে না।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির দশম সংসদ নির্বাচনের মতো এবার নির্বাচনের আগে-পরে ষড়যন্ত্র-নাশকতা হতে পারে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমি অশনিসংকেত দেখতে পাচ্ছি। সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। নৌকাকে বিজয়ী করতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। মনে রাখতে হবে, ক্ষমতায় আসতে না পারলে ২০০১ এর চেয়েও ভয়াবহ পরিণতির শিকার হতে হবে।
সভায় সারাদেশের ৩০০ আসনের আওয়ামী লীগের ৪ হাজার ২৩ জন মনোনয়নপ্রত্যাশী ছাড়াও দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন। গণভবনে উপস্থিত আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা প্রধানমন্ত্রীকে উদ্বৃত করে আমাদের সময়কে এসব তথ্য জানান।
আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকারের পর্বটি ধানম-ির রাজনৈতিক কার্যালয়ে হওয়ার কথা থাকলেও স্থান স্বল্পতায় গণভবনে অনুষ্ঠিত হয়। অনানুষ্ঠানিক এ অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বক্তব্য রাখেন। প্রধানমন্ত্রী ৭২ মিনিটের দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য রাখেন।
গণভবন সূত্রে জানা গেছে, একাদশ সংসদ নির্বাচনে জয়ের কোনো বিকল্প নেই জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আগামী নির্বাচনে আমরা যদি বিজয়ী না হই, যদি সরকার গঠন করতে না পারি তা হলে দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতি যেমন থেমে যাবে তেমনই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা কেউ ঘরে থাকতে পারবে না।
তিনি এ সময় ২০০১ সালের নির্বাচন পরবর্তী সময়ের কথা মনে করিয়ে দিয়ে বলেন, ১৯৯৬ থেকে ২০০১ আমরা ক্ষমতায় ছিলাম। ২০০১ এর নির্বাচনে বিএনপি আসার পর সারাদেশে কী তা-ব চালিয়েছিল মনে নেই আপনাদের। আমাদের হাজার হাজার নেতাকর্মী খুন হয়েছে, অনেক মা-বোন ধর্ষিত হয়েছে। মামলা-হামলায় বাড়িতে থাকতে পারেননি অনেকে। আপনারা আবার কী সেই সময়ে ফিরে যেতে চান? এমন প্রশ্নের জবাবে গনভবনের সবুজ মাঠে টানানো শামিয়ানার নিচে উপস্থিত সবাই সমস্বরে ‘না-না’ করে ওঠেন।
আগামী নির্বাচনের আগে ও নির্বাচনে পর দলের সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, দশম সংসদ নির্বাচনের আগে বিএনপি সারাদেশে যেমন অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর চালিয়েছিল এবারও তারা এমন নাশকতা চালাতে পারে। শুধু তাই নয়, ২০১৫ সালে আমরা সরকার গঠনের পর তারা নানা ষড়যন্ত্র করেছিল সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরানোর জন্য।
দলীয় মনোনয়নের বিষয়ে আওয়ামী লীগের সংসদীয় বোর্ডের সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, গত দুই বছর ধরে আমি জরিপ চালিয়ে যাচ্ছি। জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে জরিপ চালিয়েছি। জরিপের ভিত্তিতে মনোনয়ন দেওয়া হবে। কোন প্রার্থীর প্রতি ভোটারের সমর্থন আছে, সেটা বিবেচনায় নেওয়া হবে। অঙ্কের মতো হিসাব করে করে এই জরিপ করেছি। তিনি বলেন, দলে কে বড় নেতা কে ছোট নেতা সেটার চেয়ে গুরুত্ব পাবে জরিপে কে এগিয়ে আছে। জরিপে যারা এগিয়ে তাদের হাতেই উঠবে নৌকা প্রতীক।
মনোনয়নপ্রত্যাশীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনার এত এত মানুষ দলীয় মনোনয়ন ফরম কিনেছেন তা এক অর্থে পজেটিভ। কারণ, অন্তত দলের ফান্ড তো বেড়েছে। প্রায় ১১ কোটি টাকা আমাদের ফান্ডে এসেছে। কিন্তু আরেকটা বিষয় আমাকে হতাশ করেছে। কিছু কিছু এলাকায় দেখেছি এত বেশি মনোনয়ন ফরম কেনা হয়েছে। এতে আমার মনে হয়েছে এটা ওই এলাকার এমপির দুর্বলতা, দলের সাংগঠনিক দুর্বলতা। যে ৪ হাজার ২৩ জন প্রার্থী আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম তুলেছেন তাদের সবাই এমপি হওয়ার যোগ্য মন্তব্য করে সবাইকে আশ্বাস দিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। ক্ষমতায় এলে অনেক পদ সৃষ্টি করা হবে, সেখানে সবাইকে অ্যাকোমোডেট করা হবে।
আওয়ামী লীগ সভাপতি আরও বলেন, এখনো নির্বাচন নিয়ে, আওয়ামী লীগকে নিয়ে ষড়যন্ত্র হয়েছে এখনো চলছে। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থেকে এ ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করতে হবে। কেউ যদি মনে করে, অন্য সিটে তো জিতব, আমার একটা সিটে হারলে কী হবে? এমনটি ভাবলে আমরা একটি আসনেও জিতব না। ৩০০ আসনেই জয়ের জন্য কাজ করতে হবে আমাদের।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি যাকেই মনোনয়ন দেব, তাকেই আপনাদের মেনে নিতে হবে। আপনারা কথা দিলেন?’ এ সময় প্রধানমন্ত্রীর কথায় মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সবাই সম্মতি দেন।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি সবার সম্পর্কে জানি। আপনাদের সব তথ্য আমাদের কাছে আছে। কারা কি করেছেন, কারা কোন দল থেকে এসেছেন আমি সব জানি। বেশি লাফালাফি করার দরকার নেই। কোনো গ্রুপিং করারও দরকার নেই।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে জরিপ চালিয়েছি। এর ভিত্তিতে মনোনয়ন দেওয়া হবে। কোনো প্রার্থীর প্রতি ভোটারের সমর্থন আছে, সেটা বিবেচনায় নেওয়া হবে।’
মনোনয়ন যাকেই দেয়া হোক, তার পক্ষেই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার নির্দেশও দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। বলেন, ‘প্রার্থীর বিরোধিতা করা হলে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হবে। একটা সিটেও হারব- কারো এমন মনোভাব পোষণ করা যাবে না।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনারা সবাই যদি ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ না করেন, তাহলে আগের মতো বর্তমান পরিস্থিতিতে নির্বাচনের সবার দায়িত্ব নিতে পারবো না। এবার নেত্রীকে বেটে খাওয়ালেও কাজ হবে না। আমরা আগামী নির্বাচন নিয়ে কাজ করছি না। আমরা কাজ করছি আগামী প্রজন্ম নিয়ে।’
লাস্টনিউজবিডি/আনিছ