জয়পুরহাটে ঘাস চাষে কৃষকদের ভাগ্য বদল!

রাজা চৌধুরী, লাস্টনিউজবিডি, ৩১ মার্চ, জয়পুরহাট প্রতিনিধি: জয়পুরহাট জেলার বিপুলসংখ্যক দরিদ্র মানুষ ঘাস চাষ করে নিজেদের ভাগ্য ফিরিয়েছেন। ঘাসের পাশাপাশি গরুর খামার করে তারা এখন প্রতিষ্ঠিত ক্ষুদ্র দুধ ব্যবসায়ী।
জয়পুরহাট প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলার পাঁচ উপজেলায় তালিকাভুক্ত ঘাস চাষের পরিমাণ হচ্ছে সদর উপজেলায় ১৭৮ বিঘা, আক্কেলপুরে ৩৫ বিঘা, কালাইয়ে ৪০ বিঘা, ক্ষেতলালে ১০ বিঘা ও পাঁচবিবি উপজেলায় ১৫০ বিঘা। এসব জমিতে পাকচং, নেপিয়ার ও জার্মান ঘাস চাষ হচ্ছে।
এর মধ্যে জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার সমসাবাদ গ্রামের কৃষক রহুল আমিনের সাফল্য চোখে পড়ার মতো। তিনি একসময় অন্যের বাড়িতে দিনমজুরি ও ভ্যান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। এখন তিনি পাকা বাড়ি করেছেন। বাড়িতে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে পালন করছেন দুধের গাভী।
সন্তানদের লেখাপড়া করাতে পারছেন। পরিবারের প্রয়োজন মিটিয়েও নেপিয়ারসহ উন্নত জাতের ঘাস বিক্রি করে তিনি বছরে আয় করছেন পাঁচ লাখ টাকা।
রহুল আমিনের এমন অবিশ্বাস্য সাফল্যের পেছনে প্রধান ভূমিকা রেখেছে উন্নত জাতের নেপিয়ার ও পাকচং জাতের ঘাস চাষ। পাঁচ শতাংশ জমি দিয়ে শুরু করে এখন তিনি আট বিঘা জমিতে ঘাষ চাষ করছেন।
রুহুল আমিনকে অনুসরণ করে একই গ্রামের ফেরদৌস, হাকিম, জিন্নাত আলী, শফিকুলসহ অনেকেই ঘাস চাষে নেমে পরেছেন।
তারা উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় থেকে হাইব্রিড নেপিয়ার ও পাকচং ঘাস চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন বলে জানা গেছে।
পাঁচবিবি উপজেলার ধরঞ্জি গ্রামের মাফুজার রহমান জানান, এ গ্রামেই ১০০ বিঘা জমিতে ঘাস চাষ হচ্ছে। এছাড়া উপজেলার বিরঞ্জন, বাগজানা, পাটাবুকা, সমসাবাদ, নাছেরাবাদ, ফেনতারা, চরা কেশবপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় বাণিজ্যিকভাবে ঘাসের চাষ দিন দিন বাড়ছে।
সল্প পরিসরে ঘাস চাষ করে গরুর বড় খামারি হওয়ার মতো গল্পও আছে। পাঁচবিবি উপজেলার নিলতা গ্রামের জসিম। অর্থাভাবে এসএসসি পরীক্ষার পর লেখাপড়া চালিয়ে যেতে না পারায় শুরু করেন গরু পালন। নিজের খামারের জন্যই ২০১২ সালের দিকে অল্প পরিসরে ঘাস চাষ শুরু করেন। এখন অন্যের সাত বিঘা জমি ইজারা নিয়ে ঘাস চাষ করেছেন। এ বছর তার মুনাফা হয় প্রায় ৫ লাখ টাকা। এ আয় থেকে গরুর শেড তৈরি করে বাণিজ্যিকভাবে গরু পালন করছেন। সংসারের ব্যয় বহনের পাশাপাশি দুই ভাই-বোনের লেখাপড়ার খরচও চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
সদর উপজেলার কাশিয়া বাড়ি এলাকার আব্দুল হামিদ জানান, সারাদিন খেটে দুই থেকে আড়াইশ টাকা রোজগার করে সংসার চালানো কঠিন হয়ে যাচ্ছিল। এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে এখন ঘাস চাষ করে সব ঋণ শোধ করার পাশাপাশি তার সংসার চলছে বেশ সচ্ছলভাবে।
জেলা ভারপ্রাপ্ত প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মামুনুর রশিদ জানান, গো-খাদ্যের মূল্য বেশি হওয়ায় বিকল্প হিসেবে উন্নত জাতের ঘাসের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তাই আমরা ঘাসের কাটিং (মুথা) সরবরাহ করে চাষিদের সাধ্যমতো সহযোগিতা করে যাচ্ছি।
লাস্টনিউজবিডি/মেহেদী
Comments are closed