দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর অবস্থান

।। আলীমুজ্জামান হারুন ।।
আমাদের সমাজে দুর্নীতি অনেক পুরনো একটি ইস্যু। এই ইস্যু নিয়ে অনেকে অনেক রকম রাজনীতি করেছেন। ”দুর্নীতির বিরুদ্ধে জেহাদ” নামের সার্কাসও দেখিয়েছেন কেউ কেউ। সার্কাসের মজমা শেষ হওয়ার পর দেখা গেছে, সার্কাসওয়ালা নিজেই দুর্নীতির দায়ে ফাটকে আটক।
আসলে দুর্নীতি একটি দুরারোগ্য সামাজিক ব্যাধি। এই ব্যাধি নির্মূল করতে হলে জানতে ও বুঝতে হবে, কেন এক শ্রেণীর মানুষ দুর্নীতি করে, কিভাবে দুর্নীতি করেও বহাল তবিয়তে থাকে। দুর্নীতি উচ্ছেদ করতে হলে এর শেকড় ধরে টান দিতে হবে, শুধু উপরে মলম লাগালে কাজ হবে না।
কিন্তু যুগ যুগ ধরে আমাদের শাসকরা মলম লাগানোর কাজটিই করে এসেছেন, মূলে হাত দেননি বা দিতে চাননি কেউ। ব্যতিক্রম শুধু শেখ হাসিনা ; আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। দুর্নীতি উচ্ছেদের কোনো রকম হাঁকডাক না দিয়েই তিনি বেতন বোর্ডের মাধ্যমে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন দ্বিগুণ করে দিলেন। তারপর চুপচাপ পরিস্থিতি অবলোকন করলেন। দীর্ঘ পর্যবেক্ষণ শেষে অবশেষে গত রোববার মুখ খুললেন। বাংলাদেশ সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত ‘সচিব সভায়’ কোনো রাখঢাক না রেখেই বললেন, ”আপনাদের বেতন-ভাতা বেড়েছে, কিন্তু দুর্নীতি কমেনি। আপনাদের দুর্নীতি-অনিয়ম বন্ধ করতে হবে। এ ব্যাপারে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না’’।
বিভিন্ন বিষয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরো বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে বেতন-ভাতা বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের অবস্থান সুস্পষ্ট। সরকারি মামলা মোকাবেলার আগে প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে আদালতে যেতে হবে। তথ্য-প্রমাণের মাধ্যমে রায় ছিনিয়ে আনতে হবে। প্রশাসনকে আরও গতিশীল করতে দ্রুত শূন্যপদ পূরণের ব্যবস্থা করতে হবে। আন্তঃক্যাডার বৈষম্য দূর করে সবার জন্য ন্যায়সঙ্গত পদোন্নতি ও পদায়ন নিশ্চিত করতে হবে।
আগামী তিন মাসের মধ্যে ‘পেপার ওয়ার্ক’ সম্পন্ন করে অর্থবছরের শুরু থেকেই বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নের কৌশল নির্ধারণ করারও নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। দক্ষ ও যোগ্য ব্যক্তিদের গুরুত্বপূর্ণ কাজের দায়িত্ব প্রদানের আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ভালো কাজের পুরস্কার আর মন্দ কাজের জন্য তিরস্কারের ব্যবস্থা কার্যকর করতে হবে। সুশাসন নিশ্চিত করার ব্যবস্থা নিন। সেবা প্রদানকারী সংস্থাগুলো থেকে সেবা পেতে জনগণকে যাতে ভোগান্তির শিকার না হতে হয়, তার উদ্যোগ নিন।’
তাঁর এ বক্তব্যের প্রতিটি বাক্য ও শব্দই গভীর তাৎপর্য বহন করে। এর মধ্য দিয়েই প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক অঙ্গীকারটি প্রতিফলিত হয়ে ওঠে। একথা তো সত্য, বেতন-ভাতা বাড়ানো সত্ত্বেও দুর্নীতি বন্ধ হচ্ছে না। আমলাদের অদক্ষতা ও গাফিলতির কারণে প্রায় সব মামলায় হেরে যাচ্ছে সরকার। সরকারি দফতরের শূন্যপদ পূরণেও নেই কাঙ্ক্ষিত গতি। নির্দিষ্ট সময়ে বাজেট বরাদ্দ দেয়া হলেও বর্ষা মৌসুমে চলছে রাস্তাঘাট কাটাকাটি। সময়মতো বাস্তবায়ন হচ্ছে না উন্নয়ন প্রকল্প।
কিন্তু এ অবস্থা তো চলতে পারে না। দেশ একদিকে যেমন নানা ক্ষেত্রে সামনে এগিয়ে চলছে, তেমনি দুর্নীতি নামের ভুতটি এই অগ্রযাত্রাকে বার বার পিছু টেনেও ধরছে। প্রধানমন্ত্রী এই রূঢ বাস্তবতাটি সম্যক উপলব্ধি করেছেন। আমাদের আশার জায়গাটি সেখানেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমাদের অনেক অর্জন আছে। নিশ্চয়ই তাঁর নেতৃত্বই দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়েও আমরা জয়ী হবো।
Comments are closed