গ্রাহকদের অপেক্ষায় চব্বিশ ঘণ্টাই আমাদের নগ্ন করে রাখা হতো !

লাস্টনিউজ বিডি ডেস্ক, ৩১ জুলাই : ২০০১ সালের জুন মাসে ইন্দোনেশিয়া থেকে মার্কিন মুলুকে পাড়ি জমান সান্দ্রা। তার কাছে মনে হয়েছিল, যুক্তরাষ্ট্র হচ্ছে হচ্ছে প্রতিশ্রুতি আর সম্ভাবনার একটি দেশ।
যে রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে আসেন, তাদের একজন প্রতিনিধি নিউইয়র্কের জন এফ কেনেডি বিমানবন্দরে তাকে গ্রহণ করেন। কিন্তু পরে তিনি জানতে পারেন, যে হোটেলে তার কাজ ঠিক করা হয়েছে, সেটা শিকাগোতে। সেখান থেকে ৮০০ মাইল দূরে। সান্দ্রা বলেন, ‘আমি ছিলাম যুক্তরাষ্ট্রে একেবারেই নতুন। আমার বয়স মাত্র ২৪। তাই আমি বুঝতেও পারছিলাম না, কিসের মধ্যে আমি জড়িয়ে পড়ছি।
ফ্রান্সে পড়াশোনা করার পর ইন্দোনেশিয়ার একটি ব্যাংকে এনালিস্ট হিসাবে কাজ করতেন সান্দ্রা ওয়োরান্তু। গত দশকে দেশটি মন্দায় পড়লে আরো অনেকের মতো তিনিও চাকরি হারান। তখন সংবাদপত্রে বিদেশি চাকরির একটি বিজ্ঞাপন দেখে আবেদন করেন। যুক্তরাষ্ট্রের হোটেলে একটি চাকরি তাকে প্রস্তাব করা হয়। এজন্য তাকে ২ হাজার ৭০০ মার্কিন ডলার দিতে হয়।
তাকে মাসে ৫ হাজার ডলার বেতন দেয়ার কথা বলা হয়। ফলে নিজের ছোট মেয়েকে মায়ের কাছে রেখে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্যে রওনা হন সান্দ্রা। তিনি বলেন, ‘বিমানবন্দর থেকে বেরিয়ে প্রথমে তারা আমাকে একটি গাড়িতে তোলে। এরপর আরেকজন ড্রাইভারের একটি গাড়িতে আমাদের তোলা হয়।
এভাবে আরো দুইবার গাড়ি বদলে শেষে এমন একজন ড্রাইভারের হাতে আমাদের তুলে দেয়, যে একটি পিস্তল দেখিয়ে আমাদের ব্রুকলিনের একটি বাসায় নিয়ে যায়। তখনি আমি বুঝতে পারি, আমি একটি চক্রের হাতে পড়েছি। কিন্তু তাদের হাতে অস্ত্র থাকায় আমাদের করার কিছু ছিল না।’
সান্দ্রা আরো বলেন, ‘সে বাসায় ঢুকেই আমি দেখতে পাই, একটি ছোট মেয়েকে কয়েকজন মিলে মারধর করছে। এটা হয়তো আমাদের জন্যই একটি সতর্কবার্তা ছিল।’
সর্বশেষ যার খপ্পরে পড়েছিলেন সান্দ্রা যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তাকে জোর করে যৌন কাজে বাধ্য করা হয়। সান্দ্রার ভাষায়, ‘আমাকে ত্রিশ হাজার ডলার দিয়ে তারা কিনেছে বলে জানানো হয়।
এরপর তারা আমাকে নানা হোটেল, যৌনপল্লি, বাসা আর ক্যাসিনোতে নিয়ে যায়। একেকটি জায়গায় আমাকে সব্বোর্চ্চ দুইদিন করে আটকে রাখে। গ্রাহকদের অপেক্ষায় প্রায় চব্বিশ ঘণ্টাই আমাদের নগ্ন করে আটকে রাখা হতো। কোন গ্রাহক না এলে তখন আমরা কিছুটা ঘুমানোর সময় পেতাম।
প্রায়ই তাকে বিভিন্ন হোটেল বা ক্যাসিনোতে নিয়ে যাওয়া হতো। সেখানে সবসময়ই পিস্তল নিয়ে একজন পাহারায় থাকতো। ভুক্তভোগী এই নারী বলেন, ‘আমি যেন অনেকটা পুতুলের মতো হয়ে গিয়েছিলাম। মারধরের ভয়ে তারা যা বলতো, তাই করতাম। শুধু টিকে থাকার চেষ্টা করছিলাম।
একদিন এই চক্রের কাছ থেকে পালিয়ে একটি পুলিশ স্টেশনে গিয়ে নিজের কাহিনী খুলে বলে সান্দ্রা ওয়োরান্তু। কিন্তু পুলিশ কর্মকর্তা তাকে বিশ্বাস করেননি। ইন্দোনেশিয়ার দূতাবাসে গিয়েও তিনি কোনো সহায়তা পাননি।
পরে রাস্তায় রাস্তায় অনেকদিন ঘুরে বেড়ান। পার্কে দেখা হওয়া একজন নাবিক এফবিআইকে খবর দিলে তারা তার তথ্য যাচাই করে দেখে। পরে গোয়েন্দারা ব্রুকলিনের সেই বাসায় অভিযান চালিয়ে চক্রের সদস্যদের গ্রেপ্তার করে।
লাস্টনিউজ বিডি-এম/এ/এইচ
Comments are closed