এতিমখানা ও লিল্লাহবোডিংয়ের নামে ছাত্রদের দিয়ে ভিক্ষাবৃত্তি

খুরশিদ আলম শাওন,
লাস্টনিউজবিডি, ৩০ এপ্রিল, রাণীশংকৈল : রবিবার নেকমরদ বাজারে বিশাল হাটে টিনের তৈরী করা একটি বাক্স বাড়িয়ে দিয়ে বলেন, ভাই আমাদের মাদ্রাসায় সহযোগিতা করেন। কারও ইচ্ছে হলে দুই একটা সাহায্যে করছে কারও না হলে করছে না।
ঠিক এ-সময় এ প্রতিবেদক মাদ্রাসার পক্ষে সহযোগিতা তুলা শিক্ষার্থীকে কাছে ডেকে নিয়ে নাম জিজ্ঞেস করলে বলেন আমার নাম মুনির, আমি বাংলাগড় তালিমুল হাফেজিয়া এতিমখানা ও লিল্লাহবোডিং মাদ্রাসায় পড়ি। তোমার বাবা মা নাই প্রশ্নে বলেন- আছে, পড়ার খরচ দেয় না ?দেয়। কত মাসে পাচশত টাকা, পড়াশুনা বাদ দিয়ে সহযোগিতা নিতে আসছো কেন প্রশ্নে বলেন আমার হুজুর আলমগীর ও সুলতান পাঠিয়েছে, না আসলে তারা মারধর করে।
মুনিরের বাসা উপজেলার রাঘবপুর নামক গ্রামে বলে জানা যায় সে এবং আরও ৩-৪জন প্রতি হাটেই টাকা সাহায্যে নিতে যায়। এ প্রতিবেদক শিক্ষার্থী মুনিরের দেওয়া ঠিকানা অনুযাযী ঠাকুরগাওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলার বাংলাগড় নামক স্থান রাস্তার পাশ্বেই অবস্থিত মাদ্রাসাটিতে গেলে দেখা যায় আর দুজন শিক্ষার্থী শান্ত ও রনি পড়াশুনা বাদ দিয়ে রাস্তায় টেবিল বসিয়ে টাকা তুলছেন। তাদের টাকা তুলার নির্দেশ কে দিয়েছে প্রশ্নে বলেন বড় হুজুর। তাদের কাছে জানতে চাওয়া হয়। তোমাদের এ মাদ্রাসায় ছাত্র কতজন তারা বলেন মাত্র ৬জন, শিক্ষক ২জন, এ মাদ্রাসা ৩ কক্ষ বিশিষ্ট চুতুর দিকে ইট প্রাচী ঘেরা, বাড়ীটির মালিক ঐ এলাকার বিপ্লব নামক ব্যক্তি তিনি ঢাকায় চাকরি করেন।
মুহতামিম আলমগীরের সাথে কথা হলে তিনি বলেন এরা সবাই গরিব অসহায়, আমি এদের বিনে পয়সায় খাওয়াই আর কুরআন শিক্ষা দেই আর মাঝে মাঝে কিছু সহযোগিতা তুলতে পাঠাই, কুরআন শিক্ষা দেন কখন? বলেন সন্ধা আর সকালে। তাহলে কি সারাদিন এরা এই ভিক্ষাবৃত্তি পেশায় থাকে? তখন আর কোন জবাব দেন না মুহতামিম।
তখন এ প্রতিবেদক মুহতামিমের নিকট মুনিরের বাবা আব্দুল হামিদের ফোন নাম্বার নিয়ে ফোনে কথা হলে তিনি বলেন আমার ২টি ছেলেকে কুরআন শিক্ষার জন্য ঐ মাদ্রাসায় দিয়েছি ভিক্ষা করার জন্য নই। আমি মাসে খরচও দিচ্ছি, আমার সন্তানকে দিয়ে আমি রাস্তায় রাস্তায় টাকা তুলতে দিতে পারি না।
এ উপজেলায় লিল্লাহ বোর্ডিং, কুরআন শিক্ষা, হাফেজিয়া মাদ্রাসার নামে ব্যাঙের ছাতার মতো গর্জে উঠেছে। এসব প্রতিষ্ঠানের ছাত্রদের দিয়ে রাস্তায়, হাট বাজার, ব্যবসা কেন্দ্রগুলোতে টাকা কালেকশনের কাজ চলছে পুরোদমে। আগামী দিনে যারা দেশের নেতৃত্ব দিয়ে জাতির মাথা উঁচু করবে তাদের প্রতি অমানবিক আচরন করে এসব প্রতিষ্ঠানের প্রধানরা। তাদের রাস্তায় দাঁড় করিয়ে টাকা উঠানো, হাট বাজারে গিয়ে মানুষের কাছে টাকা চাওয়া. গ্রামে গঞ্জে বিভিন্ন ফসলাদি চাওয়ানো হয় এসব প্রতিষ্ঠানের নামে।
প্রতিষ্ঠানের নামে ভিক্ষা বৃত্তির কাজে ছাত্রদের অভ্যস্ত করে গড়ে তোলা হচ্ছে। সরকার যখন জাতিকে সুশিক্ষিত করে গড়ে তোলার দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে এমন সময়ে এসব লিল্লাহ বোর্ডিং এর গুরুত্ব- প্রয়োজনীয়তা কতটুকু তা ভেবে দেখার বোধগম্য রয়েছে।
এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মো. আব্দুল আওয়াল বলেন, এই প্রথম আপনার কাছে শুনলাম, বিষয়টি আমি দেখি। সত্যতা পেলে ছাত্রদের দিয়ে যেন টাকা উঠানো না হয় সে ব্যাপারে প্রতিষ্ঠান প্রধানদের অনুরোধ করবো।
লাস্টনিউজবিডি, এ এস
Comments are closed