রুয়েটের নূন্যতম ক্রেডিট সিস্টেম ‘ভালো’ নাকি ‘খারাপ’?

শাহীন আলম, লাস্টনিউজবিডি, ২৯ জানুয়ারি, রাবি: পরবর্তী বর্ষে উঠার জন্য ন্যূনতম ৩৩ ক্রেডিট অর্জন নিয়ম বাতিলের দাবিতে আজ রোববারও ক্লাস বর্জন করে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) তিনটি সিরিজের শিক্ষার্থীরা। গতকাল শনিবারও তারা একই দাবিতে আন্দোলন করে। তবে এখন পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের দাবিকে অযৌক্তিক বলে উল্লেখ করছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
রোববার সকাল ৯টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার চত্বরে শিক্ষার্থীরা অবস্থান নেয়। প্রশাসনের এই সিদ্ধান্ত শিক্ষার্থীদের জন্য ক্ষতিকর উল্লেখ করে তাদের দাবি আদায়ে নানা ¯েøাগান দিতে থাকে।
এর আগে ২০১৫ সালের ১১ আগস্ট একই দাবিতে রুয়েটের উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করে প্রশাসন ভবনের সামনে আন্দোলন করে রুয়েটের শুধু ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা। এর পরের দিন ১২ আগস্ট রাতে ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের সকল ক্লাস-পরীক্ষা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। তবে প্রশাসনের অনড় অবস্থানের কারণে তখন শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে আসেন। পরে আবার ক্লাস শুরু হয়েছিলো। দেড় বছর পর হঠাৎ গতকাল শনিবার আবারও একই দাবিতে ২০১৩-১৪, ২০১৪-১৫ ও ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শুরু করে।
রুয়েট সূত্রে জানা গেছে, রুয়েট শিক্ষার্থীদের পরবর্তী বর্ষে উত্তীর্ণ হবার ক্ষেত্রে দুই সেমিস্টারে বাধ্যতামূলক ৪০ ক্রেডিটের মধ্যে ন্যূনতম ৩৩ ক্রেডিট অর্জন করতে হয়। অন্যথায় তাকে পুনরায় সেই বর্ষেই থাকতে হবে। এর আগে নিয়ম ছিলো, কোনও শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অকৃতকার্য বা অনুপস্তিতির কারণে ন্যূনতম ক্রেডিট অর্জন না করলেও পরবর্তী বর্ষে উত্তীর্ণ হতে পারতো। সেক্ষেত্রে পরবর্তীতে পরীক্ষা দিয়ে উক্ত ক্রেডিট অর্জন করতে হতো। তবে ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষ থেকে এ নিয়ম পরিবর্তন করে।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ৩৩ ক্রেডিট পদ্ধতির কারণে শিক্ষার্থীরা নানা সমস্যার সম্মুখীন হবে। বিশেষ করে, রুয়েটে ক্লাস-ল্যাবের সংকট থাকার কারণে যারা ক্রেডিট অর্জন করতে পারবে না তাদেরকে অন্য ব্যাচের সাথে ক্লাস বা ল্যাবে থাকতে হবে। সেক্ষেত্রে জায়গা ও শিক্ষাগত দুই দিকেই সমস্যা হবে। এছাড়া কোনও শিক্ষার্থী অসুস্থ বা অন্য কোনও সমস্যার কারণে পরীক্ষা দিতে না পারলে তার এক বছরের বেশি সময় ক্ষতি হবে। এমনকি সিলেবাসগত জটিলতাতেও পড়তে হয় ওই শিক্ষার্থীকে। প্রশাসন কোনও পদ্ধতি প্রণয়ন করলে সেটা সবদিক বিবেচনা করে করা উচিত বলেও দাবি করেন শিক্ষার্থীরা।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বাইরেও বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী জাগো নিউজকে জানান, ‘সর্বপ্রথম আমাদের মাথায় নিতে হবে এটা একটা বিশ্ববিদ্যালয়। এখানে বিদ্যার চর্চা এবং ওই বিদ্যাকে কাজে লাগিয়ে নতুন কিছু উৎপাদন করার জন্য চাই পরিশ্রম ও তার জন্য সময়। কিন্তু এই ক্রেডিট সিস্টেমের ফলে শিক্ষার্থীরা শুধু পাশ করার চিন্তায় পড়াশোনা করবে যা মুক্ত জ্ঞানচর্চার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।’
তারা জানান, ‘বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এমনিতেই মুক্তচিন্তা করার জায়গা কমে গেছে। আবার এই ক্রেডিট বাধাধরা করে দেওয়ার ফলে শিক্ষার্থীকে কেবল নামধারী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি হয়ে সেই স্কুল-কলেজ সিস্টেমকেই চর্চা করবে। এর ফলে যেটা হবে শিক্ষার্থীরা আর নতুন করে কিছু উদ্ভাবন করতে পারবে না।’
শিক্ষার্থীরা আরো বলেন, ‘এই সিস্টেম যদি এতোই ভালো হতো তাহলে রুয়েটের চেয়েও বাংলাদেশে যে ভালো ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়গুলো রয়েছে, তারা এই নিয়ম চালু করেনি কেনো?’
তবে এর বিপরীত চিন্তাও অনেক শিক্ষক ও শিক্ষার্থী করছেন। তারা মনে করছেন, পড়াশোনার প্রতি যদি তারা মনোযোগী না হয় তবে তাদের সৃষ্টিশীল চিন্তারও উন্নতি ঘটবে না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রুয়েটের এক শিক্ষক জাগো নিউজকে বলেন, ‘একজন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়ে পড়াশোনার মাধ্যমে পাশ করে করে পরবর্তী ক্লাসে উঠবে এটাই তো স্বাভাবিক। কিন্তু এর ব্যাতিক্রম চিন্তা কেনো থাকবে? একজন শিক্ষার্থীকে প্রমোশন পাওয়ার জন্য অবশ্যই তাকে বিষয়ভিত্তিক জ্ঞান অর্জন করতে হবে।’
এই ক্রেডিট সিস্টেম নিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ইমেরিটাস ড. অরুণ কুমার বসাক জাগো নিউজকে বলেন, এই ক্রেডিট সিস্টেমটা থাকা উচিৎ। কারণ এতে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার একটা চাপ থাকে। আরা পড়াশোনা না করে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুধু পাশ করে ওই শিক্ষার্থীগুলো করবেটা কী?
তিনি আরো বলেন, রুয়েটের ওই শিক্ষার্থীদের জন্য হয়তো এই সিস্টেম ভালোই হবে কিন্তু ওই শিক্ষার্থীরা সেটা বুঝতে পারছে না। আর শিক্ষার্থীরা তো ভুল করতেই পারে, তাদেরকে সেটা বোঝাতে হবে। সবচেয়ে বড়ো কথা রুয়েটের মতো প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা না পড়াশোনা করে করবেটা কী শুনি।
শিক্ষার্থীদের এ দাবিকে অযৌক্তিক উল্লেখ করে রুয়েটের উপাচার্য অধ্যাপক রফিকুল আলম বেগ বলেন, ‘ফেল (অকৃতকার্য) করে কি কখনো উপরের ক্লাসে উঠা যায়? আমরা তাও তো একটি-দুটি বিষয়ে ফেল করলেও যেন পরের বর্ষে উঠতে পারে সে ব্যবস্থা রেখেছি। ওরা তো সব বিষয়ে ফেল করেও পরবর্তী বর্ষে উঠার দাবি করছে।’ তিনি আরও বলেন, বিভাগীয় প্রধান ও ডিনদের সঙ্গে আলোচনা করে শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফিরে আসার জন্য নোটিশ দিতে বলা হয়েছে। এরপরও না আসলে পরে সেটা অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল দেখবে।
শাহীন আলমলাস্টনিউজবিডি/এমএইচ
Comments are closed