ঝালকাঠিতে অটোরিকশা শ্রমিকদের কান্না

নজরুল ইসলাম,
লাস্টনিউজবিডি, ২৯ জানুয়ারি, ঝালকাঠি : ঝালকাঠিতে মহাসড়কে থ্রিহুইলার চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকায় অভ্যন্তরিন সড়কে চলছিল অটোরিকশা।
দুই হাজার অটোরিকশা প্রতিদিন শহরের মধ্যে চলাচল করে। এই অটোরিকশার রোজগারের ওপর নির্ভশীল মালিক ও চালকদের পরিবার।
একটি অটোরিকশায় দুইটি পরিবারে জীবীকা নির্বাহ হচ্ছিল। কিন্তু পৌর কর্তৃপক্ষ লাইসেন্স নবায়নের অযুহাতে প্রায় দেড় হাজার অটোরিকশা শহরে চলাচল বন্ধ করে দেন। এতে বেকার হয়ে পড়েছেন অটোরিকশা চালকরা।
ক্ষুব্ধ ও হতাশাগ্রস্ত চালকরা তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে অসহায় হয়ে পড়েছেন। সন্তানদের পড়ালেখার খরচতো দূরের কথা তিনবেলা খাবারও জুটছেনা তাদের।
জানাযায়, উচ্চ আদালতের নির্দেশে মহাসড়কে থ্রিহুইলার জাতীয় যানবাহন চলাল বন্ধ করে দেওয়া হয়। ঝালকাঠি-বরিশাল ও বরিশাল পটুয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কেও এসব যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ।
এসব সড়কে চলাচলকারী অটোরিকশাগুলো শহরের অভ্যন্তরিন সড়কে ঢুকে পড়ে। প্রতিদিন ঝালকাঠি শহরে প্রায় দুই হাজার অটোরিকশা যাত্রী নিয়ে চলাচল করে।
অন্য যানবাহনের চেয়ে কম খরচে গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য অটোরিকশাকে বেছে নেন যাত্রীরা। শহরের এক প্রন্ত থেকে অন্য প্রান্ত যেতে খরচ মাত্র ২০ টাকা। এতে যেমন যাত্রীদেরও উপকার হয়, তেমনি প্রাতিদিন ৮০০-১০০০ টাকা রোজগার করছেন অটোরিকশা চালকরা।
এ উপার্জনের অর্থ দিয়ে অটোরিকশা চালকরা ছেলে মেয়ের পড়ালেখা ও সংসারের খরচ বহন করেন।
এ অবস্থায় ঝালকাঠি আঞ্চলিক পরিবহন কমিটি বৈঠক করে পৌর কর্তৃপক্ষকে ব্যাটারী চালিত ইজিবাইক (অটোরিকশা) নতুন রেজিস্ট্রেশন বন্ধ ও রেজিস্ট্রেশন নবায়ন বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন।
গত বছরের ৩ আগস্ট জেলা আঞ্চলিক পরিবহন কমিটির সভাপতি মো. মিজানুল হক পৌরসভার মেয়রের কাছে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি প্রেরণ করেন। পৌর কর্তপক্ষ ২৪ সেপ্টেম্বর চিঠিরপ্রাপ্তি স্বীকার করে অটোরিকশা চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে।
পৌরসভায় দুই হাজার অটোরিকশা থাকলেও পৌর কর্তৃপক্ষ লাইসেন্স নবায়নকৃত ৪৮৮টি অটোবাইক চালকদের তালিকা দেন পুলিশের কাছে। অন্য অটোরিকশাগুলো অবৈধ বলে মৌখিকভাবে জানানো হয়।
এর পর থেকে শহরে শুধুমাত্র ৪৮৮টি অটোরিকশা বিভিন্ন সড়কে চলাচল করছে। আর বন্ধ রয়েছে প্রায় দেড় হাজার অটোরিকশা।
অটোরিকশা চালকরা অভিযোগ করেন, থ্রিহুইলার মহাসড়ক ও আঞ্চলিক মহাসড়কে চলাচল বন্ধ, কিন্তু অভ্যন্তরিন সড়কে চলাচল বন্ধ নয়। পৌর কর্তৃপক্ষ নতুন লাইনেন্স দিচ্ছেনা এবং লাইসেন্স নবায়নও করছেনা। এতে শহরের মধ্যে তারা অটোরিকশা চালাতে পারছেনা।
অটোরিকশার মালিক কাজল মুন্সি বলেন, আমি অটোরিকশাটি ভাড়া দিয়ে প্রতিদিন চারশ টাকা পাই। চালক রোজগার করে আরো চারশ টাকা। সবমিলিয়ে দুইটি পরিবারের সংসার চলে একটি অটোরিকশা দিয়ে।
পৌরকর্তৃপক্ষ আমাদের নতুন লাইসেন্সও দিচ্ছেনা, পুরনো লাইসেন্স নবায়নও করছেননা। এতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে অটেচালকরা। তারা না খেয়ে দিন পার করছে।
অটো রিকশা চালক হরিদাস চন্দ্র মন্ডল আক্ষেপ করে বলেন, প্রায় চারমাস অটো চালাইতে পারিনা। ক্যামনে সংসার চালামু। তিনবেলা ঠিকমত খাবার জোগাইতেও পারিনা।
পোলাপানের ল্যাহাপড়ার খরচ পাইনা। মোগো অটো চালাইতে দেলে মেয়রের জন্য দোয়া করমু। অটো চালক আমির হোসেন বলেন, মেয়র একজন ভাল মানুষ, আমরা তাকে ভোট দিয়া বানাইছি।
আমাগো দিকেওতো তার চাইতে অইবে। আমরা এখন নাখাইয়্যা আছি, এটা তার বিবেচনা করা উচিত। অটো না চালাইতে পারলে বেকার হয়ে যামু।
ঝালকাঠি পৌরসভার মেয়র লিয়াকত আলী তালুকদার বলেন, উচ্চ আদালতের নির্দেশ এবং ঝালকাঠি সড়ক পরিবহন কমিটির সভাপতির চিঠি পেয়ে আমি নতুন লাইসেন্স ও লাইসেন্স নবায়ন করছিনা।
ভবিষ্যতে কোন নির্দেশনা আসলে সে অনুযায়ী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।
লাস্টনিউজবিডি, এ এস
Comments are closed