চিকিৎসক ও ওষুধ সংকটে ঠাকুরগাঁও মা ও শিশু কল্যান কেন্দ্র, দুর্ভোগে রোগীরা

বিধান চন্দ্র দাস,
লাস্টনিউজবিডি, ২৮ নভেম্বর, ঠাকুরগাঁও : ঠাকুরগাঁও মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের প্রধান চিকিৎসক, মেডিকেল অফিসার ক্লিনিকসহ ৩টি পদ দুই বছর ধরে শুন্য থাকায় চরম দুর্ভোগে পরেছে গর্ভবতী মায়েরা।
পাশাপাশি প্রতিমাসে আউটডোরে আসা দুই সহস্রাধীক রোগী গত দুমাস ধরে ওষুধ না পেয়ে খালি হাতে ফিরে যাচ্ছে।
এতেও বিড়ম্বনার যেন শেষ নেই গর্ভবতী মা, শিশু, প্রসবত্তর রোগীদের। তবে কর্তৃপক্ষ বলছে, ওষুধ সরবরাহ স্বাভাবিক হলে এবং শুন্যপদে ডাক্তার আসলেই আগের মতো সেবা পাবে রোগীরা।
ঠাকুরগাঁও শহরের প্রধান কেন্দ্র পৌরসভার সামনেই অবস্থিত মা ও শিশু কল্যান কেন্দ্র। ২০ শষ্যার এ কেন্দ্রে গর্ভবতী মায়ের সব ধরনের সেবা, সাধারণ ও সিজারিয়ান প্রসব সেবা দেওয়া হয়।
এছাড়াও শিশু পরিচর্ষা, প্রজননতন্ত্র সংক্রামক সেবা, যৌনবাহিত রোগী, কিশোরী সেবার পাশাপাশি পুরুষ ও মহিলাদের স্থায়ী পদ্ধতি, আইইউডি, ইনজেকশন, ইমপ্লান, খাবার বড়ি, কনডম, ভায় ও এমআর সেবা দেওয়া হয় এ কেন্দ্র থেকে।
ঠাকুরগাঁও মা ও শিশু কল্যান কেন্দ্র সূত্রে জানা যায়, ২০১৪ সালের ১৫ অক্টোবর এমও ক্লিনিক ডা: নাসিমা আক্তার জাহান পদোন্নতি পায়। এর ফলে দু বছর ধরে এ পদটি শুন্য ছাড়াও পরিবার কল্যান পরিদর্শীকা, সহকারি নার্সিং এটেনডেন্ট পদ শুন্য দীর্ঘ দিন।
ফলে এ কেন্দ্রে সিজারিয়ান কাজ প্রায় বন্ধ। পদোন্নতি পাওয়া সাবেক মেডিকেল অফিসার ক্লিনিক ডা: নাসিমা আক্তার তার নিজ ইচ্ছায় শুধু মাত্র একেবারেই গরীব গর্ভবর্তী মাদের সিজার করছেন।
চলতি বছরের মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত ১৪০ জনের সিজার জনিত প্রসব হলেও জুলাই ও আগস্ট মাসে সিজার হয় মাত্র ৩০জনের।
আর এ কেন্দ্রে স্বাভাবিক ভাবে প্রতিমাসে প্রসব হচ্ছে ১শ’ থেকে ১শ ২০ জন পর্যন্ত।
মা ও শিশু কল্যান কেন্দ্রের নার্সরা জানান, ঠাকুরগাঁও মা ও শিশু কল্যান কেন্দ্রে এমও ক্লিনিকের পদটি অত্যন্ত গুরুত্ব পূর্ন। তাই কাজে কিছুটা ভাটা পড়েছে।
যেক’টা সিজার হচ্ছে শুধু মাত্র পদোন্নতি পাওয়া ডা: নাসিমা আক্তারের নিজ ইচ্ছায়।
সিজারিয়ান রোগী ছাড়াও এ কেন্দ্র টিতে প্রতিদিন সেবা নিতে আসে প্রসবত্তোর গর্ভবতী, কিশোরী সেবা, শিশু পরিচর্ষার কয়েকশ রোগী। গত দু’মাস ধরে এ কেন্দ্রটিতে বর্হিবিভাগের রোগীদের ওষুধ সংকটে ভুগছে।
এতে রোগীদেও শুধুমাত্র ব্যবস্থাপত্র ছাড়া আর কিছুই দিতে পারছেনা। ফলে রোগীরা খালি হাতে ফিরে ওষুধ কিনতে হচ্ছে নিজ অর্থে।
ঠাকুরগাঁও আক্চা এলাকা থেকে সেবা নিতে আসা আকলিমা আক্তার বলেন, হামরা গরিব মানুষ, টাকা নাই ওষুধ কিনিবার। তাই এইঠে আইসচি। কিন্তু এইঠেও ওষুধ নাই। এলা হামরা যাবো কোনঠে। ওষুধ কিনার টাকা তো নাই হামার।
শহরের মুন্সিপাড়া এলাকার নুরজামান বেগম বলেন, আমি গর্ভবতি হওয়ার পরে প্রতিদিন এখানে সেবা নিতে আসি। নিয়মিত চেকআপ করাই। কিন্তু এখানে বাচ্চা প্রসব করানো হবে না আমার।
সিজারের জন্য ডাক্তার নাই। তাই বাহিরে বেশি টাকা দিয়ে সিজার করাতে হবে আমাকে। এখন টাকা জোগার করার জন্য চিন্তায় আছি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন নার্স বলেন, নিয়মিত অনেক গর্ভবতি মহিলা আসে সেবা নেওয়ার জন্য। আমরা সেবা দিতে পারি কিন্তু ওষুধ দিতে পারি না। খুব খারাপ লাগে রোগিদের ফেরৎ দিতে।
আবার অনেকের সিজারের প্রয়োজন হয় কিন্তু আমরা সিজার করাতে পারছিনা ডাক্তারের অভাবে। ডাক্তার আর ওষুধ জলদি দেওয়ার জন্য কতৃপক্ষকে অনুরোধ করছি।
ঠাকুরগাঁও পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের উপ-পরিচালক তারিকুল ইসলাম চিকিৎসক ও ওষুধ সংকটের কথা স্বীকার করে বলেন, বর্তমানে ওষুধের সরবরাহ পাওয়া গেছে।
কয়েক দিনের মধ্যেই রোগীদের ওষুধ দেয়া হবে। আর এমও ক্লিনিকের পদ অচিরেই পুরন হবে বলে জানান তিনি।
লাস্টনিউজবিডি, এ এস