নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে আ’লীগ নেতার নদী দখল

লাস্টনিউজবিডি, ২৯ এপ্রিল, ঝালকাঠি : ঝালকাঠির কুমারখালী মৃত নদী দখলে নিয়ে স্থায়ী বাঁধ নির্মান করে নলছিটি উপজেলার স্বার্থন্বেষী এক আ’লীগ নেতা মৎস্য ব্যবসার উদ্দোগের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছে স্থানীয় এলাকাবাসী।
প্রভাবশালী এই নেতার জনস্বার্থ বিরোধী তৎপরতায় বিক্ষুদ্বু এলাকাবাসী সহ ৩শতাধিক জেলে পরিবার ইতিমধ্যে প্রতিবাদ বিক্ষোভ মিছিল, মানববন্ধন, ও বরিশালে এক সংবাদ সম্মেলন করলে সে বাঁধ নির্মানের কাজ অব্যহত রেখেছে।
এ অবস্থায় ক্ষতিগ্রস্থ এলাকাবাসী ও প্রভাবশালী আ’লীগ নেতা সহ তার ভাড়াটে সন্ত্রাসীদের সাথে যেকোন সময় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশংকা দেখা দিয়েছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে।
এমন কি উক্ত বাঁধ নির্মানের বিরুদ্ধে আদালত নিষেধাজ্ঞা জারী করলেও প্রভাবশালী ঐ নেতা তা উপেক্ষা করে তার কার্যক্রম অব্যাহত ভাবে চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
তাই দ্রুত নদীতে বাঁধ দেয়ার কাজ বন্ধ করার জন্য প্রধানমন্ত্রী, শিল্পমন্ত্রী আলহাজ্ব আমির হোসেন আমু ও প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিকট ভূক্তভুগী এলাকাবাসী সহ ৩শতাধিক জেলে পরিবার আসু হস্তক্ষেপ কামনা করেছে ।
অনুসন্ধানকালে জানা গেছে, প্রায় ৩০ বছর আগে সুগন্ধা নদীর বুকে চর জেগে ওঠায় কুমারখালী এলাকা থেকে ১১৯ একর জুড়ে নদীতে লঞ্চ চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ওই অংশটি পরে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ মৃত ঘোষণা করে। তবে সুগন্ধা নদীর সঙ্গে সংযোগের কারণে জোয়ার ভাটার পানি সচল থাকায় নদীর মৃত অংশে মাছ শিকার করে স্থানীয় ৩শতাধিক জেলে পরিবার তাদের জীবিকা নির্বাহ করছে। সেই সাথে স্থানীয় কৃষক ও গ্রামবাসী তাদের ফসলের ক্ষেতে এই নদী থেকেই পানি সরবরাহ করে আসছে।
এ অবস্থায় গত ১৬ এপ্রিল স্থানীয় প্রভাবশালী আ’লীগ নেতা অলিউর রহমান রুনু চৌধুরী ও তার ভাড়াটে স্বন্ত্রাসীরা দলবল নিয়ে কুমারখালী মরা নদী দখলের তৎপরতা শুরু করে।
অস্ত্রশস্ত্র সহ তার প্রায় শতাধিক দলবল সুগন্ধা নদী থেকে জোয়ার ভাটার পানি প্রবেশের স্থানটিতে স্থায়ী ভাবে বাঁধ নির্মাণর কাজ শুরু করে। স্থানীয় গ্রামবাসী তার কাছে বহু অনুনয়-বিনয় করলেও তাকে থামাতে না পেরে নিজেদের ক্ষতির হাত থেকে বাঁচতে ঝালকাঠিতে আদালতের আশ্রয় নিলে জনস্বার্থ বিরোধী এহেন বাঁধ নির্মাণের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন।
কিন্তু ক্ষমতাশীন দলের নেতা রুনু চৌধুরী ও তার ভাড়াটে স্বন্ত্রাসীরা আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করেও তার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানায়।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সুগন্ধা নদী দিয়ে জোয়ারে পানি কুমারখালী মরা নদীতে প্রবেশের পথে প্রায় ৬০/৭০ জন শ্রমিক পার্শ্ববর্তী চর থেকে মাটি কেটে বাঁধ নির্মাণের কাজ করছে। তবে সাংবাদিকদের দেখে প্রথমে বাঁধ নির্মাণের কাজে যুক্ত শ্রমিকরা কাজের গতি কমিয়ে দেয়। বাঁধের অদূরে ১৫/২০ জন যুবক লাঠিসোটা নিয়ে পাহাড়ারত ওদখা যায়।
এব্যাপারে স্থানীয় শিক্ষক জামাল হোসেন বলেন, সরকার উন্মুক্ত জলাশয় লিজ দেয়া অনেক আগে থেকেই বন্ধ করে দিলেও প্রভাবশালী মহল সরকারের কাছ থেকে লিজ নিয়েছেন দাবি করে বাধ নির্মান করছে।
স্থানীয় মৎস্যজীবী জব্বার সিকদার বলেন, অলিউল ইসলাম রুনু চৌধুরী ও তার ছেলে সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে নদীতে বাঁধ দিয়ে আমাদের মাছ শিকার করে দিয়েছে ও নদীতে নামলেই মারধর করছে। তাদের বিরুদ্ধে কথা বললে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে দিয়ে হয়রানি করছে। তারা এভাবে বাঁধ দিলে এখানের প্রায় ৩শতাধিক মৎস্যজীবী পরিবার না খেয়ে মরবে বলে সে জানায়।
এ ব্যাপারে অলিউর রহমান রুনু চৌধুরী দাবী করেন, সে সরকারের কাছ থেকে জমিটি লিজ নিয়ে এখানে মাছ চাষ করার জন্য বাঁধ দিচ্ছে। এতে এলাকার লোকজনের ক্ষতি হবে না বরং উপকারই হবে। আদালতের নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে প্রশ্ন করলে বলেন, মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিয়ে তিনি কাজ করছে।
নলছিটি থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুলতান মাহমুদ বলেন, কুমারখালী গ্রামের বাসিন্দারা আমাকে বিষয়টি মৌখিকভাবে জানিয়েছেন।
আমি ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়েছি। রুনু চৌধুরীকে কাগজপত্র নিয়ে থানায় আসতে বলা হয়েছে। আমাদের কাছে আদালতের নির্দেশ আসা মাত্রই কাজ বন্ধ করতে বলা হবে।