চলমান অস্থিরতা দেশকে অচল করতে পারে : মুরসি
ঢাকা, ২৭ জুন (লাস্ট নিউজ) : মিসরের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসি দেশবাসীর উদ্দেশে বলেছেন, চলমান অস্থিরতা দেশকে অচল করে দেওয়ার জন্য হুমকিস্বরূপ। প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতা গ্রহণের প্রথম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে গতকাল বুধবার টেলিভিশনে দেওয়া ভাষণে এ কথা বলে হুঁশিয়ার করেন তিনি। বৃহস্পতিবার বিবিসির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
ভাষণে মুরসি স্বীকার করেন তার কিছু ভুল হয়েছে এবং সংবিধান সংশোধনে বিরোধী পক্ষকে কিছু বলার প্রস্তাব দিয়েছেন।
২০১২ সালের ৩০ জুন মুসলিম ব্রাদারহুডের এই নেতা প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। আরব বিশ্বের জনবহুল এ দেশটির তিনি প্রথম ইসলামপন্থী প্রেসিডেন্ট।
মুরসি বলেন, ‘রাজনৈতিক মেরুকরণ ও সংঘাত এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে, যা আমাদের সদ্য লব্ধ গণতান্ত্রিক অভিজ্ঞতার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। একই সঙ্গে তা গোটা জাতিকে অচল করা ও বিশৃঙ্খলার দিকে ঠেলে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছে।’
কিছু ক্ষেত্রে নিজের ভুলের কথা স্বীকার করে মুরসি বলেন, ‘কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমি ঠিক ছিলাম। আবার কিছু ক্ষেত্রে ভুল করেছি। ক্ষমতা গ্রহণের এক বছর পর আমি উপলব্ধি করেছি, লক্ষ্য অর্জনের জন্য বড় ধরনের পদক্ষেপ নিতে হবে।’
প্রেসিডেন্ট বলেন, দেশটি দুর্নীতিতে ডুবে যাওয়ার দায় আমি নিচ্ছি।’ এ সময় তিনি কয়েকজন রাজনীতিক, বিচারক ও সাংবাদিকের নাম উল্লেখ করে বলেন, তারা ঘড়ির কাঁটা পিছিয়ে আবার মুবারকের সময়ে মিসরকে ফিরিয়ে নিতে চান।
বিরোধী দলগুলোকে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সরকার পরিবর্তন ঘটানোর আহ্বান জানান মুরসি। তবে জাতীয় সংলাপে অংশ নেওয়ার বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করায় তিনি তাদের সমালোচনা করেছেন।
প্রেসিডেন্ট বলেন, সংবিধান সংশোধনে যে কমিটি কাজ করবে, এর চেয়ারম্যান নিয়োগে আজ এক বৈঠকে বসতে বিরোধী দলগুলোর নেতাদের আহ্বান জানানো হয়েছে। তবে তারা তা প্রত্যাখ্যান করেছেন। গত বছর সংবিধান সংশোধনের খসড়া অনুমোদন করা হয়।
মুরসি তার ভাষণে জ্বালানি-সংকটের কারণে জনগণের মধ্যে যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে, তার জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করেছেন। তবে যারা তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে এবং দেশকে অন্তর্ঘাতের দিকে ঠেলে দিতে চাইছে, তাদের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন তিনি।
প্রেসিডেন্ট মুরসির অপসারণের দাবিতে চলতি সপ্তাহের শেষ দিকে যে বিক্ষোভ হওয়ার কথা, এই বিক্ষোভ মোকাবিলায় মিসরের সর্বত্র নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে।
মুরসির ভাষণকে কেন্দ্র করে মানসুরা শহরে গতকাল ভয়াবহ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। স্বাস্থ্যমন্ত্রীর মুখপাত্র জানান, সরকারের সমর্থক ও বিরোধীদের মধ্যে এই সংঘর্ষে দুজন নিহত ও ১৭০ জন আহত হয়েছে।
মুরসির এই ভাষণ উপলক্ষে সরকারবিরোধীরা গতকাল তাহরির স্কয়ারে এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বাইরে জড়ো হন।
সরকারবিরোধীরা জানিয়েছেন, তারা মুরসির অপসারণের দাবিতে এক কোটি ৩০ লাখ মানুষের স্বাক্ষর সংগ্রহ করেছেন। এ জন্য তার আগাম নির্বাচনের দাবি জানান। অন্যদিকে মুরসির সমর্থকেরা বলছেন, তাকে সরিয়ে দেওয়ার দাবিতে যেকোনো পদক্ষেপই হবে অগণতান্ত্রিক।
বিশ্লেষকদের মতে, অস্থিতিশীল অবস্থা এবং ক্রমাগত সহিংসতার হুমকি দেশটিতে বিদেশি বিনিয়োগ ও পর্যটনশিল্পকে হুমকির মুখে ফেলবে।
দেশটিতে বেকারত্ব বাড়ছে, বিশেষ করে তরুণদের বেকারত্বের হার বাড়ছে। দেশটির বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাচ্ছে।
সূত্র : বিবিসি